লেখার অক্ষরে বকে যাওয়া
চিঠি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'চিঠি হচ্ছে লেখার অক্ষরে বকে যাওয়া'!
এখনকার সময়ে বকে যাওয়ার জন্য লেখার অক্ষর খুব ধীরগতির প্রক্রিয়া তাই সামনাসামনি হয়ে অথবা ফোন করে সবাই বকে যায়।
এত সময় কই এখন সবার?!
চিঠি লিখে অনেকে প্রেম করতেন আগে। সবাই ঘুমানোর পর চুপিচুপি লিখে চিপায় চুপায় লুকিয়ে ফেলা! কিংবা চোখের পানিতে ভেজা চিঠির ছড়িয়ে পড়া কালির অক্ষর অস্পষ্ট হওয়া সবই এখন অতীত।
এই যে চিঠি পেতে কালবিলম্ব হওয়াতে যে ছটফটানি তাতে কিন্তু ভালোবাসা কমতো না মোটেই ।
একটা সিনেমা দেখলাম।
"দ্য জাপানিজ ওয়াইফ"। বাংলা, ইংরেজি কিংবা জাপানিজ ভাষার যেটাতে সিনেমাটি দেখতে আরাম বোধ করবেন সেটাতেই দেখতে পারেন।
দেখানো হয়েছে চিঠি লিখে প্রেম এবং চিঠি লিখে সংসার!
চিঠি লিখেও সংসার হয় নাকি!
পাশাপাশি থেকে একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ না শুনে সংসার!
সিনেমাটির বিশেষত্ব নির্মাতা অপর্ণা সেন এখানেই তুলে ধরেন।
"
আমার মনে আছে, আমি তখন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে প্লে'তে পড়ি। সেসময় থেকেই গোটা গোটা ইয়া বড় অক্ষরে গ্রামে নানীর বাড়ি চিঠি লিখতাম।
সেসময় থেকেই শুরু চিঠি লেখা। শেষ লিখেছি নজরুলের "বাঁধন হারা" পড়ার পর।
"একটি প্রস্ফুটিত ফুলের হাসিতে যে কত কান্নাই লুকানো থাকে, তা কে বুঝবে? ফুলের ওই শুভ্র বুকে যে ব্যাথার কীটে কত দাগ কেটেছে, কে তা জানতে চায়?"
কী চমৎকার ভাবে লিখেছেন!
আমি ভাবছিলাম এটা কি চিঠি নাকি কবিতা?!
পত্রোপন্যাস এত দারুণ হয় জানতাম না।
একটা পত্রে বিষয়বস্তু হিসেবে মূলত থাকে কী?
প্রেম?
উহু! প্রেম বাদেও নানান বিষয়ে পত্র লেখার নজির আমরা দেখেছি।
কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোটও চিঠি। কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার মাধ্যমে একটা চিঠি বদলে গেলো সুইসাইড নোট নামে!
"
কাজী নজরুল ইসলাম কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে বিরহসমেত একটা চিঠি লেখেন।
"যেদিন আমি ওই দূরের তারার দেশে চলে যাবো; সেদিন তাকে বলো, এই চিঠি রেখে সে যেন দুফোঁটা চোখের অশ্রুর দর্পন দেয় শুধু আমার নামে"।
কার জন্য ছিলো এত বিরহ?
ফজিলাতুন্নেসা জোহা'(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী)'র জন্য ছিল সে বিরহ।
"
আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলমের জেলে থাকার একশ দিন উপলক্ষে অরুন্ধতী রায় একটি চিঠি পাঠান।
লেখেন, প্রিয় শহিদুল, আপনার কারা কুঠুরি যতই নিঃসঙ্গ হোক, জানবেন, আমাদের নজর আপনার উপর আছে।
"
রুশ কবি মায়াকোভস্কি আত্মহত্যার আগে প্রেমিকাকে চিঠিতে লেখেন,
লিলি আমাকে একটু ভালোবাসো!
কী হাহাকার একটু ভালোবাসার জন্য!
চিঠিতে প্রাপক একজন মানুষই হতে হবে এমনটা যেহেতু আমি মনে করি না তাই রুদ্রের বলা কথা আমি মানি। আকাশের ঠিকানা সহ পাতাল, ডোবার ঠিকানাতেও লিখি।
আমি অলক্ষ্যে চেয়ে মহাদেব সাহার কবিতা আওয়াতে থাকি -
করুণা করে হলেও চিঠি দিও,
মিথ্যে করে হলেও বোলো,
ভালবাসি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন