কাফকার মেটামরফোসিস
অনেকের মত আমারও ইচ্ছে হয় সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে কোথাও চলে যেতে।
প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতার মত বলতে ইচ্ছা হয়, সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাবো শুভা!
কিন্তু পারি না।
একই সাথে যদি থাকতে এবং চলে যেতে পারতাম!
আমরা অনেক সময় বলি, আমি স্বাধীন এবং যখন যা মন চায় তাই করি।
কিন্তু আমি একই সাথে কোথাও যাবো আবার এখানেই থাকবো এমনটা করতে পারবো?
কিছু খাবো আবার খাবো না একই সাথে?
কিংবা এই বইটা পড়বো আবার পড়বো না?
আসলে সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে।
স্রষ্টা সব পারেন যদি ধরে নেই তবুও তিনি এমন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না যা তিনি নিজে ধ্বংস করতে পারবেন না!
এই সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আমার আর হারিয়ে যাওয়া হয়না। যদিও মুখে বলি, কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা।
সমাজ, পরিবার, ধর্মের বেড়াজাল থেকে পালাতে যেয়ে স্বপ্নে কখনো আরশোলা কিংবা গুবরেপোকা হয়ে যাই!
যেখানে আমি থাকি অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের মাঝামাঝি!
কাফকার মেটামরফোসিসের গ্রেগর স্যামসার মত ছটফট করতে থাকি।
কিন্তু বেমালুম নাই হয়ে যাই সবার মাঝখান থেকে। আমার শূন্যতা কিছুটা খালি তো করবেই তবুও তা কতদিন?
শোক, আহাজারি কতদিন স্থায়ী হয়?
লেখক পেরোগ্রিনোসে প্রথম বই লেখা শেষে আত্মহত্যা করে।
দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অথবা জীবনকে অর্থপূর্ণ করার জন্য!
কিন্তু কতটা পারে?
দ্য মিথ অব সিসিফাস পড়তে যেয়ে বুঝলাম আমার এবং আমাদের জীবনের সাথে সিসিফাসের কোনো তফাৎ নেই। সিসিফাস যদি আমি, আমাদের রূপক হয় তাহলে পাথর আমাদের জীবন।
আমাদের প্রতিদিনের খাওয়া, ঘুম, শনি-রোববার গোনা, যৌন কাম মেটানো, বাচ্চা নেওয়া, পেটপূজার জন্য আয় রোজগার ইত্যাদি ইত্যাদি হলো সিসিফাসের পাথর ঠেলে পর্বতের চূড়ায় তোলা।
আবার পাথর গড়িয়ে পড়ে এবং আমরা পাই আরেকটি ভোর, আরেকটি দিন।
এসবই পুনরাবৃত্তি!
দস্তয়েভস্কি'র নায়কের মত নিজেকে প্রশ্ন করি, জীবনের অর্থ কী?
আমিই কি এ্যাবসার্ড মানুষ? নাকি ক্ষোভে পূর্ণ?
যে মানুষ ক্ষোভে পূর্ণ, জগৎ সেই মানুষকে আর বেশি কিছু সাধতে পারে না। তাহলে হয়ত আমারও আর কিছু পাওয়ার নেই কিংবা জগত সংসারের আমাকেও কিছু সাধবার নেই!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন