শাদা-কালো

লিও টলস্টয়ের "তিনটি প্রশ্ন" গল্পে রাজার মত করে আপনাদের আমি তিনটি প্রশ্ন করি -


যখন আমরা কোনো ব্যক্তিকে বলি, সে আস্ত একটা শয়তান অথবা সাক্ষাৎ দেবতা তখন সেই ব্যক্তির মাঝে কতটা শয়তানি থাকলে তাকে শয়তান বলি অথবা কতটা ভালো মানুষ হলে তাকে দেবতা সম্বোধন করি?

কাউকে দেখে আমরা যখন তাকে কালো বা শাদা বলি তখন সেই ব্যক্তি আসলে কতটা কালো বা শাদা? 

যখন একটা সিনেমায় থাকা নায়ককে দেখি সুদর্শন তখন তার সবটাই ভালো দেখি। বাস্তবে এমন আগাগোড়া ভালো কোনো মানুষ দেখি?

যখন সিনেমায় ভিলেনকে দেখি কিম্ভূতকিমাকার তখন তার সব কিছুই দেখানো হয় মন্দ।  বাস্তবে কোনো মানুষ কি এতটাই আগাগোড়া মন্দ হতে পারে? 


কেউ আগাগোড়া ভালো এবং আগাগোড়া মন্দ হতে পারে না। 


"

কেউ হয়ত একবাক্যে হুমায়ূন আহমেদকে বাজারি লেখক বলবে আবার কেউ তার অন্ধ ভক্ত হতে পারে। 

যে হুমায়ূন আহমেদকে বাজারি লেখক ভাবে তার নজরে লেখকের ভালো লেখা পড়ে না এবং যে অন্ধ ভক্ত সে হুমায়ূন আহমেদ যাই লিখুক না কেনো সব লেখাতেই চমকপ্রদ হয়।

আমাদের একচক্ষু ভাবের জন্যই হয়ত সিনেমায় ভিলেন দেখতে  কিম্ভূতকিমাকার হয়, যে মানুষের ক্ষতি করে,  যে মেয়েদের সাথে অশালীন আচরণ করে। এক কথায় সে হবে মাথার চুল থেকে পায়ের লখ অব্দি মন্দ। 

কিন্তু বাস্তবে মন্দ চেহারার লোক আছে। যারা হয়ত নায়কের মত সুদর্শন পুরুষের চাইতেও বেশি মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। 

( যে বিষয়গুলো আমাকে প্রায়শই  ভাবাতো সেই একই বিষয় হয়ত "নারী ধর্ম ইত্যাদি" বইয়ের লেখক গোলাম মুরশিদকেও ভাবিয়েছিলো। বইটি পড়তে পারেন) 



"

প্রথম প্রশ্নে আসি এবার -

একজন মানুষ ফেরেস্তা / দেবতা না এবং শয়তানও না। 

আমরা ধর্মগ্রন্থে তাঁদের যেমন রূপ দেখি / কল্পনা করি তাঁরা নিজেরাও হয়ত ততটা ভালো বা মন্দ না।


ঈশ্বর সে যিনি নিজে অমর থেকে আমাদের জন্য মৃত্যু রেখে দিয়েছেন।

সব ভালো ভালো বিশেষণ তুলে রেখেছেন নিজের জন্য।

যদিও তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দেন তবুও তিনি নিজেকে ন্যায়বিচারক দাবী করেন।  

যদিও তিনি তাঁর অবাধ্যকারীর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছেন তবুও তিনি নিজেকে দয়ালু দাবী করেন।

ঈশ্বর আসলেই কেমন সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আমি এজন্যই আসতে পারি না। 

শয়তানকে আমার বরাবরই অসহায় মনে হয়েছে।

এই যে, দুই রকম, বিপরীত, সাংঘর্ষিক এবং পরস্পর স্ববিরোধী চরিত্র মিলেই একজন মানুষ তখন মানুষকে আমরা এক শব্দে ভালো কী করে বলি? মন্দ কী করে ভাবি?

"

যাকে নিষ্পাপ বলি তার চরিত্রও কালিমামুক্ত না, যাকে পাপী বলি তার সবটা জুড়ে পাপ না।

এরপর থেকে কাউকে এক শব্দে ভালো এবং মন্দ বিশেষণে বিশেষায়িত না করি কেমন?  


আমাকে যারা খুব পছন্দ করেন অথবা খুব অপছন্দ করেন আপনাদের কল্পনার মত আমি হয়ত ততটাও ভালো না অথবা ততটাও মন্দ না।



মন্তব্যসমূহ

ধরুন, একটা মানুষ আপনার সাথে অনেক অন্যায় করেছে, কিন্তু একটা সময় তার কোনো একটা কাজের দরুন আপনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন! এটা কি হতে পারে না?
আবার, একটা খুব সুন্দর রাষ্ট্রের প্রধান আপনি। সাজানো গোছানো সবকিছু। নিজের হাতে গড়া। নিয়মগুলোও সবার জন্য কল্যানময়। কিন্তু একটা সময় কিছু লোক আপনার রাজ্যে অনিয়ম শুরু করলো। নিয়ম ভাঙলো। অন্য নাগরিকদের ক্ষতি করলো। আপনি তাকে কয়েকবার মাফও করলেন যাতে করে সে শুধরাবার সুযোগ পায়। কিন্তু তবুও শুধরালো না। আপনি কি তাদের শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করে যেতে পারবেন?
অন্যদিকে, আপনি সারাজীবন অনেক পূণ্য করলেন। কিছু কিচু পাপ হয়েছে। আরেকজন আপনার সাথেই অনেক পাপ করেছে তবে কিছু কিছু ভালো কাজও করেছে। দিনশেষে আপনার পূণ্যেরও কোনো উপহার পেলেন না, তার পাপেরও কোনো শাস্তি হলো না। বিষয়টা খুব সহজেই মেনে নিবেন কি? ইশ্বর নশ্বর হলে অভিযোগ কাকে করবেন? ন্যায় কার কাছে চাইবেন?
আপনি কি মানেন যে, প্রকাশ্য শত্রুর চেয়ে গোপন শত্রু বেশি ভয়ঙ্কর আর কাপুরুষ?
নিশ্চই নিম্ন মানসিকতার না হলে কেউ চেহারা দেখে ফেরেশতা আর শয়তান নির্ধারণ করবে না। লোকের কাছে প্রাধান্য পায় মানুষের চরিত্র কার সাথে সদৃশ। ফেরেশতা নাকি শয়তান। এক্ষত্রে আমি সহমত যে, ক্ষমতার বাইরে যেয়ে কারো চরিত্র নির্ধারন বা বিশেষায়িত করা উচিত না।
আর, মানুষ নিশ্চই বিবেকবান। তাকে সঠিক পথ বাছাইয়ের জ্ঞান দেয়া হয়েছে।
জ্যোতি বলেছেন…
আমি লেখার কোথাও বলিনি, একজন মানুষকে আপাতদৃষ্টিতে দেখেই শয়তান বা ফেরেস্তা আখ্যায়িত করা।
আমি বলেছি, 'যখন আমরা কোনো ব্যক্তিকে বলি, সে আস্ত একটা শয়তান অথবা সাক্ষাৎ দেবতা তখন সেই ব্যক্তির মাঝে কতটা শয়তানি থাকলে তাকে শয়তান বলি অথবা কতটা ভালো মানুষ হলে তাকে দেবতা সম্বোধন করি?'

কেউ আমার সাথে অন্যায় করেছে কিংবা আমি দেশের রাজা হলে এমতাবস্থায় কী করতাম অথবা আমি কার কাছে অভিযোগ করবো ঈশ্বর নশ্বর হলে?

নীটশের মতো আমিও মনে করি, ঈশ্বর মৃত ।
তার কাছে অভিযোগ করার কিছুই নেই৷
ঈশ্বর থাকলেও তাঁর কাছ থেকে ওহী আসতে যদি রাসূলগনেরই জিবরাইলকে বার্তাবাহক হিসেবে দরকার পড়ে তাহলে আমি মনে করি না, আমার আপনার কথা তার কাছে পৌঁছাবে মাধ্যম ছাড়া!

নীতি নৈতিকতার কোনো মানদন্ডই সকলের মঙ্গল করবে না, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না!
অতএব একজন নাগরিককে বিচারের আওতায় এনে মৃত্যুদন্ড দেয়া রাষ্ট্রের চরমতম অন্যায় ওই নাগরিকের প্রতি৷ সে যত বড় অন্যায়ই করুক না কেনো৷
যদি ভিক্টিম মনে করে আমার সাথে অন্যায়ের জন্য এই লোকের মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিৎ তাহলে অপরাধীকে তার হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিৎ। আমরা রাস্তায় দেখি পকেটমারকে সবাই মিলে মারধোর করছে৷ কিন্তু সবার পকেট তো সে মারে নি! অভাবে পড়ে, খাবারের কষ্টে পকেট মারার পরেও তা অন্যায় হলে তো শাস্তি দেওয়ার অধিকার শুধু তারই যার পকেট মারা হয়েছে৷ মারার অধিকার রাষ্ট্রেরও নেই!

এটা আমার মনে হয়!

তবুও বলবো, একই নীতি নৈতিকতার মানদন্ড সকলের জন্য ভালো হবেনা, গ্রহণযোগ্য হবে না!

এই রাষ্ট্র, এই ভাতের জন্য যুদ্ধ, এই আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপে বলি হবার জন্য সন্তান জন্ম দেওয়া উচিৎ নয় কারো!
সব সমস্যার মূলে একমাত্র সমাধান।
#স্টপ মেকিং বেবিস
#জন্মদানবিরোধ
#এন্টিন্যাটালিজম

আপনি চাইলেও সন্তানকে এসব থেকে আগলে রাখতে পারবেন না। সমাজে, রাষ্ট্রে বাঁচতে হলে হতে হয়, অত্যাচারী না হয় অত্যাচারিত;
কাউকে মই বানিয়ে উপরে উঠতে হয় , নাহলে মই হতে হয়;
হতে হয় শাসক না হয় শোষিত।
আপনি নিশ্চয় চাইবেন না এর কোনোটা হোক!
জ্যোতি বলেছেন…
আমি লেখার কোথাও বলিনি, একজন মানুষকে আপাতদৃষ্টিতে দেখেই শয়তান বা ফেরেস্তা আখ্যায়িত করা।
আমি বলেছি, 'যখন আমরা কোনো ব্যক্তিকে বলি, সে আস্ত একটা শয়তান অথবা সাক্ষাৎ দেবতা তখন সেই ব্যক্তির মাঝে কতটা শয়তানি থাকলে তাকে শয়তান বলি অথবা কতটা ভালো মানুষ হলে তাকে দেবতা সম্বোধন করি?'

কেউ আমার সাথে অন্যায় করেছে কিংবা আমি দেশের রাজা হলে এমতাবস্থায় কী করতাম অথবা আমি কার কাছে অভিযোগ করবো ঈশ্বর নশ্বর হলে?

নীটশের মতো আমিও মনে করি, ঈশ্বর মৃত ।
তার কাছে অভিযোগ করার কিছুই নেই৷
ঈশ্বর থাকলেও তাঁর কাছ থেকে ওহী আসতে যদি রাসূলগনেরই জিবরাইলকে বার্তাবাহক হিসেবে দরকার পড়ে তাহলে আমি মনে করি না, আমার আপনার কথা তার কাছে পৌঁছাবে মাধ্যম ছাড়া!

নীতি নৈতিকতার কোনো মানদন্ডই সকলের মঙ্গল করবে না, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না!
অতএব একজন নাগরিককে বিচারের আওতায় এনে মৃত্যুদন্ড দেয়া রাষ্ট্রের চরমতম অন্যায় ওই নাগরিকের প্রতি৷ সে যত বড় অন্যায়ই করুক না কেনো৷
যদি ভিক্টিম মনে করে আমার সাথে অন্যায়ের জন্য এই লোকের মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিৎ তাহলে অপরাধীকে তার হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিৎ। আমরা রাস্তায় দেখি পকেটমারকে সবাই মিলে মারধোর করছে৷ কিন্তু সবার পকেট তো সে মারে নি! অভাবে পড়ে, খাবারের কষ্টে পকেট মারার পরেও তা অন্যায় হলে তো শাস্তি দেওয়ার অধিকার শুধু তারই যার পকেট মারা হয়েছে৷ মারার অধিকার রাষ্ট্রেরও নেই!

এটা আমার মনে হয়!

তবুও বলবো, একই নীতি নৈতিকতার মানদন্ড সকলের জন্য ভালো হবেনা, গ্রহণযোগ্য হবে না!

এই রাষ্ট্র, এই ভাতের জন্য যুদ্ধ, এই আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপে বলি হবার জন্য সন্তান জন্ম দেওয়া উচিৎ নয় কারো!
সব সমস্যার মূলে একমাত্র সমাধান।
#স্টপ মেকিং বেবিস
#জন্মদানবিরোধ
#এন্টিন্যাটালিজম

আপনি চাইলেও সন্তানকে এসব থেকে আগলে রাখতে পারবেন না। সমাজে, রাষ্ট্রে বাঁচতে হলে হতে হয়, অত্যাচারী না হয় অত্যাচারিত;
কাউকে মই বানিয়ে উপরে উঠতে হয় , নাহলে মই হতে হয়;
হতে হয় শাসক না হয় শোষিত।
আপনি নিশ্চয় চাইবেন না এর কোনোটা হোক!

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কাফকার মেটামরফোসিস

ঈশ্বরের সাথে বিদ্রোহ

জন্মদানবিরোধ সব পর্ব একত্রে (শামস অর্ক)