নারী প্রবর্তিত ধর্ম
ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে যেয়ে জানার আগ্রহ জেগেছিলো নারী কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্ম থাকলে সেখানে নারীকে কীরূপে দেখা হয়।
পুরুষের সৃষ্টি করা ধর্মের ঈশ্বর যেহেতু পুরুষ আমি ভেবেছিলাম নারীদের সৃষ্টি করা ধর্মের ঈশ্বরী নারী হবে।
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়ে যা পেলাম -
কেবলমাত্র একটা ধর্ম পেয়েছি (আরো থাকতে পারে আমার জানার বাইরে) ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স, প্রবর্তক মেরী বাকের এডি।
যেটাকে অনেকেই ধর্ম হিসেবে মানতে নারাজ।
কারণ ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স ধর্মের সাথে বেদান্ত দর্শনের মিল আছে।
বেদান্ত দর্শনের মত এডিও বিশ্বাস করতেন,
বস্তু এবং দুর্ভোগ-দুর্দশা অবাস্তব। এই উপলব্ধিই সকল দুঃখ-বেদনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যদিও এডি দাবী করেন,
ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স বৌদ্ধ মতবাদ বা অন্য কোনো মতবাদের দিকে ধাবিত করে না৷ বরং এই প্রবণতাকে ধ্বংস করে।
(তার দাবী পুরাই অবাস্তব। কারণ এতটা মিল থাকার পরেও সে অস্বীকার করেন)
তিনি আরও বলেন, যদি গোঁড়ামিকে ধর্ম মনে করা হয় তবে ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স কোনো ধর্মই না।
(তাঁর কথার সাথে কাজের কোনো মিল নাই। কারণ ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স ধর্ম গোঁড়ামিতে ভরপুর। ধর্ম এবং গোঁড়ামি একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ!)
কিন্তু ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্সের ৬টি শিক্ষার কথা উল্লেখ করেন যেখানে মূলভাব উঠে আসে, 'বাইবেলই আমাদের চিরন্তন জীবনের গাইড, আমরা এক ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্রে বিশ্বাস করি'।
(পুরাই খ্রিস্টান ধর্মের কথা)।
সবশেষে বোঝা যায়, ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স ধর্ম খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, বেদান্তবাদের মিলমিশের একটা রূপ।
তিনি এর বাইরে আর কিছুই করেন নি!
তার ঈশ্বরও পুরুষই!
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়ে চোখে পড়লো ঋগ্বেদ।
এখানে ১০ টি মন্ডল রচনা করেন রিশিকা ভাগ নামের একজন নারী।
একটি খন্ড দিলাম বঙ্গানুবাদসহ।
কিছুটা ধারণা পাবার জন্য৷
'অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।'
বঙ্গানুবাদঃ (১) আমিই রুদ্র, বসু, আদিত্য এবং বিশ্বদেবতারূপে বিচরণ করি। মিত্র ও বরুণের আমিই ধাত্রী। ইন্দ্র, অগ্নি এবং অশ্বিনীকুমার দু’জনকে আমিই ধারণ করে থাকি।'[১]
এটা পড়ে আমার হাসি পেয়েছে৷
যেমনিভাবে পুরুষের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনো নারী পুরুষের সৃষ্টি করা ঈশ্বরের কাছেই সাহায্য চায়!
শুধুমাত্র নারীর রচনা বলে এই কয়েকটি ঋগকে ঋগ্বেদের অন্তর্ভুক্ত বলে মেনে নেননি সায়ণাচার্য !
ভাবা যায়?!
সবশেষে স্পষ্ট যে এটাও নতুন কোনো ধর্ম না!
হিন্দুধর্মের কাতারেই পড়ে৷
'
এরপর মাথায় এলো গারোদের কথা৷
গারোরা যেহেতু মাতৃতান্ত্রিক পরিবার সেহেতু ভেবেছিলাম তাদের ধর্মও (ধর্মের নাম সাংসারেক) হয়ত নারীর প্রবর্তিত।
পরে বুঝতে পারলাম সেখানে নারীর অবস্থান আরও ভয়াবহ৷
তারা সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাস করে এবং হিন্দু ধর্মের সাথে যথেষ্ট মিল।
তাদের প্রধান দেবতা তাতারা রাবুগা (এই দেবতার ১৬০ টি নাম) হলেও নন্তু-নপান্তুকে (কোথাও কোথাও নস্তু লেখা) নিয়োগ দেন পৃথিবী সৃষ্টির জন্য৷ তারা তখন নারীরূপে (গাঁরোদের পোশাক পরেই৷ যেহেতু হাতিরা কল্পনা করতে পারলে তাদের ঈশ্বরও হাতির মতই হতো!)। পৃথিবী সৃষ্টি করেন ৮ দিনে এবং ৯ম দিনে বিশ্রাম নেন!
(দেবতা পৃথিবী সৃষ্টি করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন! তারও বিশ্রাম দরকার হয়!)
গারোরা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীকেই তার স্বামী প্রহার করতে পারবেন (যেহেতু এই শব্দের অর্থই প্রভু!) কিন্তু স্বামীকে স্ত্রী কোনোমতেই, কোনো কারণেই প্রহার করতে পারবেন না! (যদিও উপার্জন নারীরাই করে)
এর মানে ধর্ম নারী কর্তৃক প্রবর্তিত হলেও, সমাজ মাতৃতান্ত্রিক হলেও নারীরা কখনোই সমাজের নীতিনির্ধারক হতে পারেনি এবং ওই সমাজ ও ধর্মেও নারীদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন