ইতিহাস বলতে আদতে কোনো ইতি না!


আমার যেমন অভিযোগ- প্রকাশক রয়েলিটি দেয় না ঠিকঠাক!

কিন্তু বই তো গিয়েছে ভালোই।  নিজে মেলার পুরোটা মাস উপস্থিত থেকেছি। 

হিসেব আছে না আমার? 


প্রকাশক হিসেব কষেন বইয়ের বাইন্ডিং এ এত, প্রচ্ছদ কর‍তে এত, ভ্যানে করে বই স্টলে নিতে এত, স্টলের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের এত,  বইটার বিক্রি এত তবে লাভ থাকে কত!


দুজনের জায়গা থেকে দুজনই যুক্তি দিলাম। আর দুজনের কারো কথাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

নৈতিকতার দুই পক্ষের এই যুক্তিকে বলে মাস্টার/স্লেভ মোরালিটি। 


এই যুক্তি আরো অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই। 

মারামারি কাটাকাটি চলছে কোথাও। দুপক্ষের কথা শুনলে মনে হয়,  আরে দুজনই তো ঠিক!


ঠিক,  ভুল, সু, কু, সঠিক,  বেঠিক, নৈতিক,  অনৈতিক এসমস্ত বিষয়ই আপেক্ষিক। 

এসব মানদন্ড মূলত সৃষ্টি করেছে মানুষেরাই।

আগেও এর মানদন্ড পরিবর্তিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।

শুধু যে নীতিবোধের ভিত ওলট পালট হয় তা নয়। 

যা আজ দেখছি তা তো অনাদি ছিলো না।

এসব কিছুই পরিবর্তন হয়, হারিয়ে যায় কালের স্রোতে। 

শোপেনহাওয়ার হতাশার সুরে বলেন,

হায়! সবকিছুই হারিয়ে যায়!

আর যা কিছু হারিয়ে যায়- এখন যা  আছে তা যদি পরের কোনো এক মুহূর্তে  হারিয়েই যায় স্বপ্নের মত তবে তার জন্য উদ্যোগ প্রচেষ্টাও আদতে কোনো মূল্য বহন করে না। 

(নিহিলিজম নিয়ে জানার ইচ্ছা থাকলে ইভান তুর্কেনিভের বই পিতা-পুত্র এবং কাম্যুর লেখা দ্য আউটসাইডার পড়তে পারেন)


এই যে আমরা একের পর এক জীবনের গোল সেট করি,  পূরণ করতে পারি অথবা ফেইল করি সাথে সাথে আরেকটা সেট করে নেই!  আগেরটা যেনো বেমালুম ভুলে যাই। 

গোল সেট করার মধ্যে জীবনের স্বার্থকতা খুঁজি। কিন্তু বাস্তবতা তো তাই 'জীবন নিরর্থক'।

চাঁদের মধ্যে কোনো বুড়ি বসে আমাদের  দিকে তাকিয়ে থাকে না, পৃথিবীতে কেউ নিজের মত করে আমাদের বোঝে না, সাত আসমানের উপর বসেও কোনো কাল্পনিক ঈশ্বর আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে না। আমরা মূলত মহাবিশ্বের তুলনায় এত তুচ্ছ যে, আমাদের পাপ পূণ্যের হিসেবের জন্য কেউ খাতা কলম নিয়ে বসে থাকে না, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কোন পা আগে বাথরুমে রাখলাম তা হা করে তাকিয়ে দেখে না, সহবাসের সময় পা কাঁধে তুলে দিলেও দুই কাঁধের ফেরেস্তার উপর পা টা পড়ে না বরং আমার সঙ্গীর কাধেই পড়ে।

তবে কেউ যদি এসমস্ত বিশ্বাস করে তাতেও আমার আপত্তি নেই।


যখন আমি নিভৃতে ভাবি আমি কী এবং প্রকৃত 'ন হন্যতে' জগতে আবিষ্কার করতে রাতের পর রাত করে দেই ভোর কিংবা আমার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মগ্রন্থ বাদেও স্রষ্টার ইতিবৃত্ত, আদি পুস্তকে খুঁজি তাঁকে তখন আমি ডুবে যাই অন্ধকারে৷ যা কবরের মত অন্ধকার!


আমরা সবথেকে স্বাধীন থাকি, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারি যখন একা থাকি। যদি এই অন্ধকার লেভেলিংকে অনুভব করতে না পারি তবে হয়ত স্বাধীনতাকে আমরা উপভোগ কর‍তেই চাই না। 

আচ্ছা, যদি ভাবি কেউ আছেন যিনি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করেন তবে আমরা অর্থহীন জীবনকে অর্থপূর্ণ ভাবতে পারি, খারাপ কিছু ঘটলেও বুকে বল এনে বলতে পারি, নিশ্চয়ই তিনি যা জানেন আমরা তা জানি না। 

এটাও তো ভালো দিক৷ 


তবে নিহিলিস্টরাও সবুর দিতে পারে, এই সূর্যের নিচে নতুন করে কিছুই ঘটেনি। 

ইতিহাস বলতে আদতে কোনো ইতি না।  নিত্য ঘটে চলছে সব কিছুর পুনরাবৃত্তি! 

সবকিছু ধ্বংসের সাথে সাথে সূর্যও  একদিন মরে যাবে!


আমি পারিপার্শ্বিক বিষয়ে অতি সংবেদনশীল হয়ে যাই কখনো৷

যখন দেখি কোনো নারীকে বিবস্ত্র করা হচ্ছে,  কোনো কন্যা শিশুর যোনী ব্লেডে কেটে ধর্ষণ করা হচ্ছে তখন বলি, তোমার মত ঘুম ঘুম নয়নে দুনিয়া দেখার শক্তি দাও ঈশ্বর। 

যেনো এসমস্ত কিছু দেখেও তোমারই মতন উদাসীন থাকতে পারি আমি৷ 

God is dead and we have killed him.  নীটসের এই লাইন আওয়াই। 

কতশত ঈশ্বর সৃষ্টি করে এসেছি আমরাই,  মেরেও ফেলেছি আমরাই। 


ঈশ্বর থাকা না থাকার চেয়ে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তিনি থাকা না থাকাতে কীই বা যায় আসছে! 


তবে এতকিছুর পরেও আমি প্রকৃত নিহিলিস্ট কিনা এটাও তো কথা।

নৈরাজ্যবাদ, নিরর্থক জীবন, ধ্বংসাত্মক দুনিয়া, সব কিছুর শেষ পরিণতি ধ্বংস, শেষ কথা নাশ, শূন্যে বিলীন হয়ে যাবো, ধ্বংসাত্মবাদ জেনেও গান গাই, চুলে আঙ্গুল চালাই, চাঁদ দেখি!

মিথ্যে জেনেও ভাবতে ভালো লাগে,

চাঁদে কোনো বুড়ি বসে আছে আর সে বুড়ি সেখান থেকেই আমাকে দেখে!

মন্তব্যসমূহ

Ranjit বলেছেন…
উঁচু মানের লেখা। ভালো লাগলো ।
Unknown বলেছেন…
সবকিছুরই শেষ পরিণতি ধ্বং।।
সুন্দর লিখেছেন আপ।
জ্যোতি বলেছেন…
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
জ্যোতি বলেছেন…
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জন্মদানবিরোধ সব পর্ব একত্রে (শামস অর্ক)

কাফকার মেটামরফোসিস

জন্ম(যন্ত্রণা)দাতা