আমার পঠিত ৫০ টি বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া
১. যৌনতার ইতিহাস-১
লেখক – মিশেল ফুকো
যৌনতা স্বাভাবিক, সহজাত শরীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ড, যাকে ক্ষতিকর পরিণাম ছাড়া অবদমন করা যায় না।
আপনি চাইলেই সন্ন্যাস জীবন বেছে নিতে পারেন তবে তা হবে সহজাত, প্রাকৃতিক বিষয়কে উপেক্ষা করেই।
ফুকোর মতে, যৌনতার বিষয়ে জ্ঞানের সাথে আধুনিক সমাজ কাঠামোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এমনকি যে ক্রিয়াকে যৌন বলে গণ্য করি তাকে আমাদের জীবনে যে প্রাধিকার দিয়েছি তাও নয়। প্রকৃত মুক্তি তখনই সম্ভব যখন শরীরের সুখকে যৌনতার অংশ করা থেকে বিরত হতে হবে। যা কখনো সম্ভব নয়। এজন্য প্রকৃত মুক্তিও অসম্ভব।
২. যৌনতার ইতিহাস ২ঃসুখের ব্যবহার
লেখক - মিশেল ফুকো
অনুবাদক - শামসুদ্দিন চৌধুরী
গ্রিকরা স্বতন্ত্র ছিলো যৌনতায় পাপ বোধের দিক থেকে। এই স্বতন্ত্রতা ছিলো সকল ধর্ম থেকেই।
কেননা সকল ধর্মই যৌনতাকে বেঁধে ফেলেছে কিছু শৃঙ্খলায়।
খ্রিস্টান ধর্মের সাথের গ্রিকদের আরেক দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে।
খ্রিস্টানদের নীতিমালা ছিল শর্তযুক্ত। যারা ভালো ও মার্জিত ব্যক্তি হতে চায় তাদের ধরিয়ে দেওয়া হতো এক সেট নিয়ম।
বেশির ভাগই পুরুষের জন্য করা নীতিশাস্ত্র । মিলনে পুরুষকে অবশ্যই সক্রিয় হতে হয় এবং মৈথুনে বরাবর পুরুষকে কর্তা বা আধিপত্য বিস্তারের ভূমিকায় দেখা যায়। এ ছিলো যৌনতা বিষয়ক দীর্ঘ এক ইতিহাসের আখ্যান লিপি । যেখানে উঠে এসেছে গ্রীকদেরই যৌন জীবন যাপন।
৩. যৌনতার ইতিহাস - ৩ : নিজের প্রতি যত্ন
লেখক - মিশেল ফুকো
অনুবাদক - শামসুদ্দিন চৌধুরী
যে বিষয়কে সংযমের ভাবি তা মূলত অপরিহার্য।
কাল পরিক্রমায় স্বেচ্ছা মিলনে কিছু বাধ্যবাধকতা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। সমাজস্বীকৃত বিয়ে প্রাধান্য পায়, বিয়ে হয়ে ওঠে প্রয়োজনীয়তা। যৌনতার ইতিহাসের পর্ব দুইতে আমরা গ্রীকের বালককামীতার ইতিহাস দেখতে পাই৷ পর্ব তিনেও বালককামীতা নিয়ে আলোচিত হয়। এবং বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে আসে রোমান যুগের কাম ।
৪. বিজ্ঞানের আলোয় সংস্কারমুক্ত যৌনতা
লেখক - ডা. ভবানীপ্রসাদ সাহু
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, বিদ্যালয় স্তরেই ছাত্র ছাত্রীরা উদ্ভিদের পরাগমিলন বা প্রাণীদের প্রজনন সম্পর্কে লেখাপড়া করে৷ অথচ নিজ প্রজাতির প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে৷
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নতি হলে যৌন নিগ্রহ অনেকাংশেই কমে যেতো।
বইতে কলকাতার সত্যি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে৷
যা ঘটে চলে আমাদের আশেপাশে, পরিবারে, কাছের মানুষের সাথে কিংবা নিজের সাথেও।
মেয়েদের জানাশোনা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শেখা, সাবলম্বী হওয়া পরিশেষে সেক্স এডুকেশন খুবই দরকারী।
যে কার্যকলাপের দ্বারা নিষ্পাপ, এক নতুন জীবনের সৃষ্টি হয় সেই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে লজ্জা, অবজ্ঞা কেন?
৫. যৌন বিজ্ঞান (১ম খন্ড)
লেখক - আবুল হাসনাৎ
আমরা যারা বিবাহপরবর্তী ধর্ষণ শব্দ শুনেই আঁতকে উঠি তাদের ভাবনাটা এমন যে, বিয়ে মানেই মিলনের একটা সনদ। যে সনদ দিয়ে যখন খুশি তখন সেই স্ত্রীর কাছে গমন করা যাবে।
সঙ্গমে নারীর মতামত গুরুত্বপূর্ণই নয় কেবল, অবশ্যকরণীয় ।
পৃথিবীর সবথেকে কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রথম অবস্থানেই আছে সন্তান জন্মদান। আর এই সন্তানকে নিজের ভিতরে লালিত করতে হয় নারীকেই।
সুস্বাস্থ্যবতী নারীর প্রসূতিতে তাদের কাহিল অবস্থা দেখি৷ ইউরোপ - আমেরিকায় সন্তান জন্ম দিতে জন্মদানকারী মায়ের মৃত্যুর সংখ্যা হাজারে ৪ জন। যেখানে কিনা রয়েছে উন্নতি চিকিৎসাপদ্ধতি৷ তাহলে বাংলাদেশসহ আরো নিম্ন আয়ের, অনুন্নত দেশে কতটা ভয়াবহ ! এজন্য অসুস্থ, রোগাক্রান্ত নারীকে জবরদস্তি করে কেবল বংশ রক্ষার তাগিদে ঝুঁকিতে ফেলা উচিৎ নয়। নারীকেই বরং এই সিদ্ধান্তটি নেবার দায়িত্ব দিতে হবে। এছাড়াও কয়েকটি সন্তান নেবার ক্ষেত্রে সন্তানদের জন্মের মধ্যবর্তী সময়ের সাথে শিশুমৃত্যুর হারের একটা সূক্ষ্ম যোগসূত্র পাওয়া যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ব্যাপক, বিপুল প্রচার, প্রসার দরকার। পাশাপাশি দরকার যৌনতাবিষয়ক জ্ঞান।
৬. কামসূত্র ( মূল বই - The Kama Sutra)
লেখক - বাৎস্যায়ন
প্রাচীন মৌর্য সভ্যতার ৮০০ বছরের শিল্প সংস্কৃতির লিখিত ইতিহাস নিয়ে রচিত 'কামসূত্র'।
কামসূত্র শুধুমাত্র যৌনতা নয়৷ আমাদের অনুধাবন বাদে বাকি পাঁচ ইন্দ্রিয় দ্বারা তৃপ্ত সবই কামের অভ্যন্তরীণ।
কাম শব্দটি সংস্কৃত । কাম বলতে প্রেম, আবেগ, বাসনা, মিলন বুঝায়৷
বাৎস্যায়ন দাবী করেছিলেন যে, বইতে দেওয়া পরামর্শ বাস্তব উপযোগিতা তিনি যাচাই করেই দিয়েছেন৷ প্রাচীন কাল থেকে ভারতে কামকলার অধ্যয়ন হয়ে আসছে৷ সেসময় কামশাস্ত্র চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয় সেসময় ধর্ম, অর্থশাস্ত্রের পাশাপাশি কামশাস্ত্র অধ্যয়ন করা হতো৷
বইতে আলোচিত কিছু বিষয় আলিঙ্গন, আসন (এই বিষয়ে অনেকের দ্বিমত পাওয়া যায় পরবর্তীতে), রতিসনদ, কামকলা, বেশ্যাগমন, নারী - পুরুষের দাম্পত্য জীবন, চুম্বন, স্বয়ংবর ইত্যাদি।
৭. উনিশ শতক বাঙালি মেয়ের যৌনতা
লেখক - অর্ণব সাহা
একজন শিশুর বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যেমন হাড়ের গঠন হয়, পেশি দৃঢ় হয় তেমনি একই শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যৌনাঙ্গ, যৌন আচরণ।
শিশু পারিবারিক এই ঘেরাটোপে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে যৌনতাও তত্ত্বাবধানের পরিসরে ঢুকে পড়ে। যৌন আচরণের ভালো - খারাপ দিক, যৌনাঙ্গের অপ্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যহীন ব্যবহার _সবকিছুই অজস্র শাসনের কোড গড়ে তোলে।
বইটি তিনটে অংশে ভাগ করে বর্ণিত হয়েছে।
উনিশ শতকে বাঙালি নারীর যৌনতা, পোশাক - ভাবনা, বাংলায় শরীর - যৌনতা - অশালীনতার এলাকা নির্মাণ।
এই বিষয়গুলো দ্বারাই সমাজের যৌনতা, যৌন আচরণ প্রকাশ পায়, এবং এসব দ্বারাই যৌনতা প্রভাবিত।
৮ . পরস্ত্রী
লেখক - গে ট্যালেসি
অনুবাদক - মোস্তফা মীর
বইতে লেখক দেখিয়েছেন আমেরিকার অদেখা যৌনতা৷
একজন পুরুষের ফ্যান্টাসির পেন্টাহাউস, প্লেবয় পত্রিকার চাঞ্চল্যকর উপাখ্যান।
এছাড়াও উঠে এসেছে লেখক অ্যালেক্স কমফোটের যৌন পর্যবেক্ষনলব্ধ জ্ঞান।
৯. ইলেভেন মিনিটস
লেখক - পাওলো কোয়েলহো
অনুবাদক - অনীশ দাস অপু
কেমন হয় একজন যৌনকর্মীর জীবন?
তারাও কি কিশোরী বয়সে আমাদের মতন করেই স্বপ্ন দেখতো সংসার, সন্তান এবং স্বামীর?
তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি, গালি হিসেবে ছুড়ি। মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজেকে প্রাণপনে তাদের থেকে আলাদা প্রমাণ করার চেষ্টা করি! যারা নাক ছিটকাই তাদের পেশা নিয়ে তারা কি ভাবি কেউ সাধে এই জীবন বেছে নেয় না?
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মারিয়া।
সেও চাইতো একটা সংসার কিন্তু জীবনের নানান প্রতিকূলতা তাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসে নিষিদ্ধ পল্লীতে।
যেখানে কষ্টের রাত কাটাতে কাটাতে মুক্তির পথ খুঁজতো।
বই পড়তে নিয়ে যারা আলো খুঁজি তারা ব্যর্থ হবেন নিশ্চিত । এ যে অন্ধকারের গল্প, না দেখা জীবনের গল্প।
১০. আমার দুঃখভারাক্রান্ত বেশ্যাদের স্মৃতিকথা
লেখক - গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস
অনুবাদক - রফিল - উম - মুনীর চৌধুরী
প্রেম যেকোনো বয়সে যখন তখন মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তখন, যেকোনো বয়স বলেই কি নব্বই বছর বয়সে প্রেম?!
মূল উপজীব্য বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে কাম এবং ভালোবাসা আলাদা দুই বিষয়। সারাজীবন একই বিছানায় থেকেও ভালোবাসা থাকে না পরস্পরের মাঝে৷ আবার বিছানার সাথে সম্পর্কহীন মানুষকেও ভালোবেসে যাওয়া যায়।
সাহিত্য সমালোচক তার জন্মদিনে উপলব্ধি করলো, সে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, মনভুলো হয়ে গেছে, গরম জলের বদলে ঠান্ডা জলেই গোসল দিয়েছে। মনের অগোচরে যেনো দেহের বয়স বেড়ে গিয়েছিলো।
হঠাৎ খামখেয়ালীর বশে পরিচিত বেশ্যালয়ের সর্দারনির কাছে কুমারী মেয়ে চায়, শয্যাশায়ী হিসেবে সেই রাতেই পেয়েও যায়।
জীবনে এত জন নারীকে শয্যাশায়ী হিসেবে পেয়েছিল তবুও যেনো ভালোবাসা অধরাই থেকে গিয়েছিলো। সেই বিছানায়, সেই ঘুমন্ত নারীকে দেখে নব্বই বছর বয়সে যেনো খুঁজে পায় অধরা, অস্পর্শী ভালোবাসাকে।
কেবল দু চোখ বুজে দেখে যায় তাকে। ভোরে ঘড়ির ঘন্টার শব্দে জেগে উঠে ঘুমন্ত কপালে চুমু খেয়ে চলে যায় বৃদ্ধ৷ বইয়ের প্রতিটি বাক্য যেনো
ভালোবাসা আর কামের সূক্ষ্ম ফারাক।
১১. সেপিয়েন্স
লেখক - ইউভাল নোয়া হারারি
আমরা আজ যে ভাষায় বলি 'পরচর্চা পাপ' সেই ভাষার উদ্ভবে মূল হোতা এই পরচর্চাই।
ভাষার সৃষ্টি হয় কীভাবে, কীভাবে আমরা একে অপরের সাথে ভাব বিনিয়ন করতাম, বনে বনে ঘুরতাম, আগুন জ্বালানো শিখলাম এসব ৭০,০০০ বছরের ইতিহাস ।
শল্প শুনতে, পড়তে সম্ভবত সবাই পছন্দ করেন এই বইতে মানব সৃষ্টির শুরু থেকে সবই বলা আছে ধাপে ধাপে। এছাড়াও বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক রঙ্গিন ছবি।
'
কৃষির উদ্ভব হয় কীভাবে?
প্রাচীনকালে আমরা বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম খাবার সংগ্রহের জন্য। শিকার না পেলে শস্যদানা নিয়ে আসতাম। যে পথ ধরে আনতাম সে পথে শস্যদানা পড়ে চারাগাছ জন্ম নিত। এ থেকে বুদ্ধি বের করি, কেন আমরা আমাদের আবাসের কাছাকাছি বীজ বপন করছি না?
এই প্রশ্নই যেনো আমাদের আটকে ফেলে সমাজ, রাষ্ট্রে!
কৃষিবিপ্লব হয় প্রায় ১১,০০০ বছর পূর্বে।
ধাপে ধাপে আমরা আবিষ্কার করতে শিখলাম, শিল্প বিপ্লব ঘটালাম। ধাপে ধাপে মানুষের বর্তমান অবস্থান।
১২. কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
লেখক - স্টিফেল ডব্লিউ হকিং
মহাকাশ, মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা পেতে বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মহাবিশ্ব দেখতে কেমন, বিজ্ঞানের শুরু থেকে দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বকে কীভাবে কল্পনা করত ?
একসময় আমরা মনে করতাম সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে কিন্তু কাল পরিক্রমায় আমাদের ধারণা বদলে গেলো। আমরা জানতে পারলাম পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহই সূর্যের চারদিকে ঘোরে। বর্তমান মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের এখন যে ধারণা সে ধারণার উৎস কী ইত্যাদি বিষয় বইতে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
স্থান - কালের মাত্রা কী করে একত্রে থাকে এবং কী করে এই দুই বিষয়কে দিয়ে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা করা যায়, অনিশ্চয়তা নীতি, মহাবিশ্বের উৎপত্তি কিভাবে, পরিণতিই বা কোথায় সব কৌতুহল মনের প্রশ্নের উত্তরে সন্নিবেশিত বইটি।
১৩. সত্যের সন্ধানে
লেখক - আরজ আলী মাতুব্বর
যখন আমরা নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলি, নিজের ধর্মগ্রন্থকে সবথেকে গ্রহনযোগ্য বলি তখন কোন যুক্তিতে বলি? যেখানে আমাদের পড়ার দৌড় কেবল নিজ ধর্মের বিষয়বস্তুতেই সীমাবদ্ধ?
আরজ আলীর মনেও এসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে কখনো কখনো। যেসব প্রশ্ন তিনি বই করতে লিখে রাখেননি, কেবল প্রশ্নের গ্রহনযোগ্য উত্তর খুঁজতেই লিখে রেখেছিলেন।
এমনই নানান প্রশ্ন, উত্তরের সম্মিলিত রূপের বই ' মুক্তির সন্ধানে' যা পাঠককে নতুন করে ভাবতে, প্রশ্ন করতে শেখাবে।
১৪. সৃষ্টির রহস্য
লেখক - আরজ আলী মাতুব্বর
এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি কোথা থেকে?
কীভাবে প্রাণের সৃষ্টি?
এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিতে কী ছিলো?
এসবের শেষ কোথায়?
এসমস্ত সৃষ্টির মাঝেই যেনো রহস্য বিদ্যমান।
ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা যতটা জানি সৃষ্টি রহস্য আরো বিশাল, বিস্তর, অসীম।
আদিপুস্তক পড়ে আমরা জানি, 'জাভে' নামের ঈশ্বর যেনো ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি মহাদেশ ও চীন, জাপান, ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি অধিবাসীদের জন্য যেন কোনো মাথাব্যথা নাই। তিনি যেন শুধু ইহুদি জাতি তথা বনি ইসরায়েলদের সমাজ, ঘর- সংসার, ঘরোয়া আলাপ নিয়ে ব্যস্ত।
ঈশ্বর কি এমনটা কাম্য?
কেবল একটা নির্দিষ্ট জাতি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন?
নজর, অনুগ্রহ যেনো সবার উপর সমান না!
আমরা দেখতে পাই আদি মাতা / আদি নারী হবা/হাওয়া নিষিদ্ধ ফল ( গন্ধম) খাওয়ার জন্য নাকি তাঁর রজঃশীলা হয়৷ তবে আমরা (সকল নারীরা) তো সেই ফল চোক্ষেও দেখিনি আমাদের এই শাস্তি কেনো তবে?
যার যার পাপের শাস্তি যদি সেই ব্যক্তিই পায় তবে কেন মা- বাবার এইডস ( অন্যান্য রোগ) সহ শিশু জন্ম নিচ্ছে?
শিশু তো নিষ্পাপ । তবে এই শাস্তি কেনো?
ইতিহাস আমাদের বলে, জীবিত ধর্মের চেয়ে মৃত ধর্মের সংখ্যা বেশি। আমরা বর্তমানে যে ধর্ম দেখছি তা অনেক বিবর্তন শেষে পাওয়া।
১৫. দি গড ডিল্যুশন
লেখক - রিচার্ড ডকিন্স
অনুবাদক - কাজী মাহবুব হাসান
আমি কোনো ব্যক্তিগত ঈশ্বরকে কল্পনা করার চেষ্টা করিনা; আমাদের অপর্যাপ্ত ইন্দ্রিয়গুলো যতটুকু বোঝার সুযোগ দেয় সেটুকু দিয়েই এই মহাবিশ্বের গঠন দেখে বিষ্ময়ে হতবাক হওয়াটাই যথেষ্ট, আইনস্টাইন বলেন। বইতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকার পক্ষে প্রস্তাবিত যুক্তিতে বলা আছে, কোনো কিছু সচল থাকতে পারে না যদি চালক না থাকে৷ অর্থাৎ সকল সচল বস্তুর চালক থাকতে হবে।"
এই যুক্তিকে ধ্রুব ধরে নিলে ঈশ্বরও তো সচল তবে কি তাঁরও চালক থাকতে হবে?
সেই চালকের আরেক চালক। এতো তবে প্যারাডক্স হয়ে গেলো।
পলিথেইজম থেকে মনোথেইজম বেশি গ্রহনযোগ্য। প্রাচীনকালে যেমন ছিলো এখনও তেমনই।
যদিও আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু ধর্মে মনোথেইজম দেখা যায় তবে সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে এত সব ঈশ্বর মূলত এক ঈশ্বরের একেক রূপে আবর্তন ; ঈশ্বর একজনই।
যুক্তিতে পলিথেইজমের চেয়ে মনোথেইজম গ্রহনযোগ্যতা লাভ করে।
ঈশ্বর হাইপোথিসিস, সেক্যুলারিজম, অ্যাগনষ্টিসিজম, বিবর্তন সবকিছুই আলোচনায় উঠে আসে।
ঈশ্বরবাদীরা দাবী করেন, প্রতিটি অস্তিত্বশীল বস্তুর অস্তিত্ব টিকে থাকার একমাত্র কারণ ঈশ্বর।
ঈশ্বর সব কিছুই করতে পারলেও আমরা দেখি ঈশ্বর এমন কিছু করতে পারে না যা অযৌক্তিক।
মনোথেইজম একটা জটিল বিষয়, বিপরীতে পলিথেইজম সহজ, সরল৷ ঈশ্বরও একজন সরল সত্ত্বা। কিন্তু যিনি মহাবিশ্বের প্রতিটি কণাকে বিরামহীনভাবে পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এবং করেনও তিনি আর যাই হোন সরল সত্ত্বা হতে পারে না।
১৬. আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না
লেখক - প্রবীর ঘোষ
বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সবকিছুর স্রষ্টা ঈশ্বরই যদি 'স্থান' -- এর (space) স্রষ্টা হয়ে থাকেন, তবে সেই স্থানকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন কোন 'স্থান'এ বসে? নাকি 'স্থান' ও ঈশ্বরের মতই স্বয়স্তূ? তাই যদি হয় সব কিছুরই স্রষ্টা হিসেবে তো ঈশ্বরকে মেনে নেওয়া যায় না।
যদি মনে করি, মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুকে নিয়মতন্ত্রে বেঁধে রেখেছে যে সেই ঈশ্বর, তবে ঈশ্বর কতটা নিয়মতান্ত্রিক?
যদি ঈশ্বর সত্যিই নিয়মতান্ত্রিক হয় তবে ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য, কৃপা লাভের জন্য পূজা, ধ্যান, সাধনা সবই অমূলক। কেননা স্রষ্টা নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে যেয়ে ভক্তের অনুরোধ রাখতে অনুগ্রহ বিলাতে পারে না। তবে তা হবে স্বেচ্ছাচারিতা।
যেমনিভাবে ঈশ্বর ন্যায়বিচারক আবার ঈশ্বর যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দেন পরস্পর স্ববিরোধী।
পুরো বইতেই আস্তিকদের প্রশ্নের উত্তর আছে। আমরা যারা বলি, যা কিছু প্রত্যক্ষ করি না এমন তো অনেক কিছুই আমরা বিশ্বাস করি৷
স্রষ্টা তেমনই কেউ একজন।
কিন্তু যেসমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ না করেও বিশ্বাস করি সেসমস্ত কিছুরই অস্তিত্ব আমরা অনুভব করি।
সহজ লজিক্যাল বিষয়কে মানতে পারি না বলেই যুগে যুগে এত ধর্মের এত ঈশ্বরের সৃষ্টি করেছি আমরাই। হাজার হাজার ঈশ্বর মরেও গিয়েছে, হাজার হাজার ধর্ম বিলুপ্তিও হয়েছে।
মৃত্যুর পর নিজের অস্তিত্ব নাশের যে শূন্যতা তা মানতে না পেরে পুনর্জন্ম, পরকাল, নরকের কথা বলে গেলাম।
ধর্মের প্রয়োজনবোধ প্রাচীনকালে ছিলো। মানুষকে বর্বর থেকে সভ্য, নিয়মের অধীন, বাধ্য করতে।
কিন্তু যখন ধর্মই মানুষকে বর্বর করে? কঠোর করে, রক্ত ঝরায়, মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসতে শেখায় না তখন ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কিসে?
১৭. সম্মোহন বিদ্যা ও হাতে - কলমে শিখিবার সরল উপদেশমালা
লেখক - রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র
যে কাজ জবরদস্তি করে করানো যায় না সেই কাজ ভালো মত বলেই সহজে করানো যায়।
মানুষদের হয়ত ছাগলের সাথে এই বৈশিষ্ট্য খুব মিলে যায়।
ছাগলকে দড়ি ধরে যেদিকই টানা হোক না কেনো ছাগল তার বিপরীতে যায়!
আমাদের মন দুইভাবে কাজ করে। চেতন এবং অবচেতন। অবচেতন মনকে তেমন একটা গোনায় না ধরলেও সেই মনের শক্তি চেতন মনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ না। অসাধ্যকে সাধন করার জন্য প্রথমত দরকার মনোবল। এই সম্মোহনই কারো অবচেতনে দৃঢ় ভাবে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, এটা সম্ভব।
এই মানসিক জোরেই যেনো সে অসাধ্যকে সাধন করে ফেলে৷
সম্মোহন বিদ্যা শেখার ধাপ, শেখার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় দেওয়া আছে৷ তবে কিছু বিষয় আমার কাছে বেহুদা আলাপ মনে হয়েছে, বিশ্বাস করতে পারিনি।
তবে এই কথাতে আমিও একমত যে, মানুষের একটা অবচেতন মনের জগৎ আছে এবং তা শক্তিশালী।
১৮. ফিলোসফিঃ প্রাথমিক ধারণা
লেখক - মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক
প্রথমেই জেনে নেই, ফিলোসোফি জিনিসটা কী।
ফিলোসফি হচ্ছে জ্ঞানের একটি শাখা, যেটি মৌলিক প্রশ্ন বা সমস্যাগুলোকে যুক্তি দিয়ে মোকাবেলা করে।
এই অনুসারে, গাছ থেকে পাতা পড়া, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘোরা, রাতে চাঁদ এবং দিনে সূর্য দেখতে পাওয়া এসব কিছুরই কারণ ব্যাখ্যা ফিলোসফির অন্তর্ভুক্ত । দর্শন হলো জীবন ও জগতের সামগ্রিক৷ একটি ইংরেজি শব্দের বাংলা মিনিং এর সাথে সাথে বদলে গেলো সেই বিষয় সম্পর্কে সম্যকভাবে ধারণা। এজন্যই লেখক দর্শন শব্দের চেয়ে ফিলোসফি শব্দের ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দেন।
ফিলোসোফি নিয়ে আমাদের ভুল ধারণা, ফিলোসোফির প্রয়োজনীয়তা, বিজ্ঞান দর্শন ও ধর্মের দ্বন্দ্ব, ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের আন্তঃসম্পর্ক, বিজ্ঞানের পরিণতি দর্শন হলেও দর্শনই শেষ অব্দি হয়ে ওঠে ধর্ম, ইসলামের দার্শনিক ব্যাখ্যার সমস্যা ও ইসলাম দর্শনের পরিসর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সহজভাবে করা আছে।
১৯. মানসিক রোগ ও সাইকোথেরাপি
লেখক - ডা. দেওয়ান ওয়াহিদুন নবী
আমরা অনেক সময় বলে থাকি, ডাক্তারের ব্যবহারে রোগ অর্ধেক সেড়ে গেছে।
কথার কথা বলি বা গুরুত্ব দিয়েই বলি না কেন, কথা কিন্তু সত্যিই।
মেডিসিনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারের ব্যবহার, আন্তরিকতা, হাসি।
সাইকোথেরাপিস্টদের আগে মানুষ নিজের মনের কষ্ট, দুঃখের কথা বাড়ির প্রবীণ কাউকে বা বিশ্বাসযোগ্য কারো কাছে বলতেন।
এতে করে মানসিক প্রশান্তি বাড়ার সাথে সাথে চাপ, চিন্তা কমে যেত। এর জের ধরেই এখন সাইকোথেরাপি।
শরীরের রোগ যেমন ছড়ায় জীবাণুর দ্বারা মনের রোগ ছড়ায় পরিবেশ, মানসিক অবস্থার দ্বারা।
কিন্তু দেখা যায় না বলেই যে উপেক্ষা করতে হবে এমন না।
এসমস্ত দরকারী বিষয় নিয়ে আলোচনা আছে। যা একজন মানসিক বিপর্যস্ত মানুষকে দিতে পারে সুন্দর জীবন।
২০. মিশেল ফুকো পাঠ ও বিবেচনা
সম্পাদক - পারভেজ হোসেন
ফুকোর মননের জগৎ, ব্যাতিক্রমী জীবন, চিন্তার বিষয়বস্তুর বৈচিত্রতা এবং সর্বোপরি ফুকো পাঠের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।
জ্ঞানচর্চার নানান জগৎ - এ বিচরণ করাবে এই বইটি। এখানে আছে ফুকোর রচনাবলি, রচনাংশ।
আমাদের দেখার আর ভাবার জগৎকে পাল্টে দিবে।
পাগলামি সম্পর্কিত ধারণা, পোস্টমর্ডানিজম : সত্য হচ্ছে এক ধরণের ক্ষমতা, মিশেল ফুকোর রচনা থেকে উদ্ধৃতি, ফুকোর মনন ও ইরানে সাংবাদিকতা - পর্ব, ফুকোর শৃঙ্গার - তত্ত্ব ইত্যাদি ফুকোর দর্শন নিয়ে লেখা।
২১. মোজেস ও একেশ্বরবাদ
লেখক - সিগমুন্ড ফ্রয়েড
অনুবাদক - সৌরীন নাগ
বইতে মূল উপজীব্য বিষয় ইহুদি ধর্ম।
খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের মাঝে রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক । ইহুদি জাতির কেবল একটা অংশ নতুন মতবাদ গ্রহণ করেছিলেন। নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে, তারাই ঈশ্বরকে হত্যা করেছে।
ইহুদিরা কেমন করে তাদের বিশিষ্ট চারিত্রিক গুণগুলো অর্জন করেছিল এবং তারা এখন পর্যন্ত একটি সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷
ইসরায়েলের লোকেরা, আধ্যাত্মিক অগ্রগতি, ধর্মের মধ্যে, মোজেস তাঁর অনুগামী দল এবং একেশ্বরবাদী ধর্ম সম্পর্কে বলেন৷
২২. স্রষ্টার ইতিবৃত্ত
লেখক - ক্যারেন আর্মস্ট্রং
অনুবাদ - শওকত হোসেন
ধর্মনিরপেক্ষতার নিরীক্ষারই চেষ্টা করেন ক্যারেন আর্মস্ট্রং।
বইয়ের পাতায় তুলে আনেন ধর্মের চার হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস।
বিস্তার করেছেন সেমেটিক অঞ্চলের একেশ্বরবাদী ধর্মের তিনটি স্রষ্টার সরূপ সন্ধান৷ এক দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ গবেষণার ফল এই বই। ধর্মবিষয়ের প্রধান ব্যাখ্যা, ধর্মতত্ত্ব নিয়ে জ্ঞান, বহু আদি বিশ্বাস নিয়ে ভাবেন তিনি। মৃত্যুর পরের জীবনের কথা ভেবে জীবনকে নিয়মে চালিত করি। অর্থহীন জীবনকে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টা করি। প্রাকৃতিক শক্তিকে ভয় পেয়ে বহু আগে করেছি বজ্র, মেঘসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পূজো৷
এ হলো আমাদের ধর্মের সেই ইতিহাস যা আমাদের জানতে দেওয়া হয়না, পড়তে দেওয়া হয় না
২৩. প্যারাডাইজ লস্ট / প্যারাডাইস লস্ট
লেখক - জন মিলটন
জন মিলটন ছিলেন ইংরেজ কবি৷ তাঁর লেখা প্যারাডাইস লস্ট বাইবেলের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে রচিত।
যেসময় এই অমর কীর্তি রচনা করেন সেসময় তিনি ছিলেন অন্ধ, জীর্ণ শীর্ণ, হত দরিদ্র।
এজন্যই লেখায় সেসবের কিছু টুকরো কথা উঠে আসে৷
যদিও কেন্দ্রীয় চরিত্র শয়তান তবে পাশাপাশি আরো যেসমস্ত চরিত্র পাওয়া যায় আদম, ইভ। [যে সাপকে দেখতে পাই ধারণা করা হয় সেই ছিলো লিলিথ]
তাঁরা ঈশ্বর সৃষ্ট প্রথম মানব-মানবী। স্বর্গের বাগানে তাঁরা বিচরণ করতেন৷ কিন্তু প্ররোচনায় নিষিদ্ধ ফল খেয়ে হলেন স্বর্গচ্যুত।
তাঁর অন্ধত্ব, দরিদ্রতাসহ সমস্ত অপারগতাকে যেনো ছাপিয়ে উঠেছে এই মহাকাব্য৷
প্যারাডাইস লস্ট বইতে পরিচিত এবং আমার খুব পছন্দের বাক্য -
Better to Reign in Hell Then Serve in Heaven.
স্বর্গের দাসত্ব থেকে নরকের রাজত্ব ভালো।
২৪. ধর্ম ও বিজ্ঞান
লেখক - বারট্রান্ড রাসেল
অনুবাদক - সাজিদ হাসান
'দম্ভে বিচারিল নানা মত__
ঈশ্বরীয় বিধি, ভবিষ্যতের জ্ঞান, ইচ্ছাবৃত্তি, নিয়তির পাশ
নিয়ন্ত্রণ নিয়তির বা মুক্ত ইচ্ছা, চরম ও অবাধ জ্ঞান ভবিষ্যতের __
কিন্তু হায়, পৌঁছিল না কোনও সমাধানে,
চক্রাবর্তে দিগভ্রান্ত গোলকধাঁধায়... "
ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক জটিল।
বারট্রান্ড রাসেল শুরুতেই বলছেন, ধর্ম ও বিজ্ঞান সমাজজীবনের দুটো দৃষ্টিকোণ।
এই দুইয়ের মাঝে চলছে সুদীর্ঘ সংঘাত ।
কে বড়?
ধর্ম না রাষ্ট্র? পোপ না রাজা? এই প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় দর্শনের বিকাশ ঘটে।
ধর্ম বর্তমানে কেবল ধর্মবিশ্বাস কিংবা গির্জার সাথেই যুক্ত নয়৷
বাইবেলে বর্ণিত সেই ইতিহাস যাকে পবিত্র বলে মনে করা হয় এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় গির্জার বিশদ ধর্মতত্ত্বের গুরুত্ব ধর্মমনস্ক পুরুষ এবং নারীদের কাছে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
কোপার্নিকাসের বিপ্লব, বিবর্তন, ডাকিনীবিদ্যা ও ভেষজ, আত্মা ও দেহ, নির্ধারণবাদ বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে 'ধর্ম ও বিজ্ঞান' বইতে।
২৫. কেন আমি ধর্ম বিশ্বাসী নই
লেখক - বারট্রান্ড রাসেল
অনুবাদক - মোঃ শামীম আহমেদ
ধর্মীয় গোড়ামিকে সহজ ও সাবলীল ভাবে যুক্তিখন্ডনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন বারট্রান্ড রাসেল তার বই ' Why I am not a Christian' বইতে।
বইতে তুলে ধরেন, দর্শন, ধর্ম, সমাজ। প্রথাগত নৈতিকতার অবিশ্বাস, প্রচলিত ধর্মের নেতিবাচক প্রভাব এসমস্তই ছিলো বইয়ের উপজীব্য বিষয়।
এছাড়াও অভিসন্ধিজাত আলোচনা, পরমেশ্বরের স্বপক্ষে নৈতিক যুক্তি, অন্যায় প্রতিকারার্থে যুক্তি, খ্রীষ্টের শিক্ষার ভ্রান্তিসমূহ, অসহিষ্ণুতার উৎস ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে৷ যা ভাবতে বাধ্য করে।
তিনি বিচক্ষণতার সহিত নির্ধারণ করেছিলেন যে, সমস্ত সম্পত্তির উৎস হল উৎপীড়ন নতুবা চুরি!
ঈশ্বর বিশ্বাস বলতে আসলেই কী বোঝায় এবং খ্রীষ্ট ধর্মের নানান অসংগতি, ভ্রান্তি তুলে ধরেন।
২৬. বিবাহ ও নৈতিকতা
লেখক - বারট্রান্ড রাসেল
অনুবাদক - কঙ্কর সিংহ
যখন একটি শিশু জন্ম নেয় তখন সে জানে না কোন পরিবারে তার জন্ম হচ্ছে, কোন ধর্মে বিশ্বাসী তার পরিবাদের সদস্যরা, যার গর্ভে এবং শুক্রাণুতে জন্ম তারা কি সমাজ স্বীকৃত বিয়ে করেছে কিনা।
তবুও বিবাহের মাধ্যমে সন্তানকে সমাজে বৈধতা দেওয়া হয়।
বিবাহ সম্পর্কে এই নিম্নস্তরের চিন্তা সমর্থনের চেষ্টা চালায় ধর্মকে হাতিয়ার করে৷ দেখানো হয় বিবাহ একটি মহৎ কাজ৷
আদিম পৃথিবীতে ধর্ম ও বর্বরতার সংমিশ্রণে জীবনের অত্যাবশকীয় বিষয় যৌনতার দিককে অবমূল্যায়ন করেছে।
যৌন শ্রান্তি পুরো ব্যাপারটির প্রবর্তক সভ্যতা।
বিবাহ মূলত পরিবারের মধ্যে শিকড়িত, পরিবার বিবাহের মধ্যে নয়। যে বক্তব্যের সাথে খ্রীষ্টধর্মের অবস্থান এখন অনেকটাই পরিবর্তীত।
সময়ের সাথে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। যেকোনো সমাজ নিয়ে আলোচনা করতে নিয়ে পারিবারিক পদ্ধতি নিয়ে বলতেই হয়।
২৭. সুখ
লেখক - বারট্রান্ড রাসেল
অনুবাদক - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী
'যে আনন্দ নিয়ে যায় কাল, কভু নাহি দেয় তাহা ফিরে।
যৌবনের ভারের গরিমা ডুবে যায় কাল সিন্ধু নীরে। '
এই কারণেই লেখক ইতিমধ্যে মরে গিয়েছে তাদের সাধুবাদ জানায়৷
আমরা কেন অসুখী হই?
মূলত সুখ খুঁজতে যেয়েই অবসাদ থেকে অসুখী হই। ঈর্ষান্বিত হই একে অপরের প্রতি। দুশ্চিন্তার পরই অসুখী হওয়ার এক শক্তিশালী কারণ এই ঈর্ষা । মানুষের সবথেকে আদিম, সনাতনী বৈশিষ্ট্য।
আমরা কেন অসুখী, আমাদের অ-সুখ, বিরক্ত, উত্তেজনা, অবসাদ সবই বর্ণিত হয়েছে 'সুখ' বইতে। পাপবোধ ঐতিহ্যগত ধর্মীয় মানসিকতা একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
মানুষ সাধারণত বিবেক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যা নিজের কাছে খারাপ অন্য সকলের কাছে ভালো তবুও সে তাকেই খারাপ বলে জানে এবং মানে। বিবেক হলো কয়েকটি আলাদা অনুভূতির অর্থবোধক।
২৮. ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল
লেখক - হুমায়ুন আজাদ
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল অর্থাৎ আমাদের পুরো দেশটার অভ্যন্তরীণ।
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
সমাজে, পরিবারে, সর্বপরি ঘরে একজন নারীর অবস্থান ফুটে উঠছে বিলু চরিত্রের মাধ্যমে।
বিয়েটা হয়ত ধর্ষণের একটা সার্টিফিকেট৷
যদি তা নাই হতো তবে কেনো মিলনে পুরুষ এতো রূঢ়, উদ্ধত, এতটা কঠোর।
বিলু চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক সম্ভবত আমার দেশের প্রতি ঘরের পট কুড়িয়ে এনেছেন৷
প্রথম মিলনের যেনো একজন নারীকে সপিয়ে দেওয়া আর এটা বজায় থাকে মৃত্যু অব্দি। এই পরাধীনতার যেনো নিস্তার নেই জীবদ্দশায়৷
জন্মের পর বাবা, বিয়ের পর স্বামী, মরার আগে ছেলে সন্তান এভাবেই পরগাছার মত কারো না কারো উপর ভর করে চলে৷
এছাড়াও আরেক শ্রেণির নারী আছে যারা উচ্চবিত্ত ঘরের এবং স্বভাবে বহুগামী ।
এই যে নানান রকম, নানান চরিত্রের নারী আমাদের চারপাশে আছে তারা সবাই কিন্তু কোনো না কোনো ভাবেই পুরুষের অধীন। নিজের সক্ষমতা, নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতা কিছুই নেই।
২৯. শুভব্রত ও তার সম্পর্কিত সুসমাচার
লেখক - হুমায়ুন আজাদ
আমরা যা ধারণ করি তাই ধর্ম। সেই ধর্ম যে প্রচলিত সাড়ে চার হাজার ধর্মের মধ্য থেকেই বাছাই করতে হবে এমন বাধ্যকতা কেনো?
একটা এলাকা, কোনো ঘটনা আর সেসবকে ঘিরে মিথ। একটা ধর্ম বাকি হাজার হাজার ধর্মের সাথে স্ববিরোধী এবং সাংঘর্ষিক৷ আপনি যেমন সকলের কাছে পছন্দের হতে পারবেন না তেমনি সকল ধর্মের ধার্মিকদের মন মত হতে পারবেন না।
মূল চরিত্র শুভব্রত,
রাজপুত্র। পীরের সন্তান পীর,
ব্রহ্মের সন্তান ব্রহ্মচারীর মত করে পিতা নমব্রত চায় পুত্র যেনো রাজ্যের রাজা হয়।
শুভব্রতর চিন্তাভাবনা বদলাতে থাকে, বহুঈশ্বরের পূজা করা থেকে এক ঈশ্বরে বিশ্বাস আনে৷ তিনি যেহেতু রাজা সেহেতু চায় সকল প্রজারাই এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হোক।
কিন্তু ধর্ম, ঈশ্বর, শয়তান সব মানুষের মধ্যেই বিরাজমান । এদের অস্তিত্ব কেবলই যেনো মগজে।
ধর্ম, ঈশ্বর নিয়ে যত রক্তপাত হয়েছে ইতিহাসে অন্য কিছুর জন্য এত রক্ত ঝরেনি।
শুভব্রত যখন এক ঈশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা করেই ফেলে তখন অনুধাবন করতে থাকে এই ঈশ্বর তার নিজেরই সৃষ্টি করা, নিজেরই ভাবনা, নিজেরই কল্পনার মূর্ত ।
এত ধর্মের পরিচয় না টেনে কেবলই মানুষ হিসেবে মানুষকে ভালবাসতে পারি না আমরা?
৩০. মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ
লেখক - হুমায়ুন আজাদ
বলা হয়ে থাকে, নিজের বিবেক সবথেকে বড় আদালত।
সকলের অজ্ঞাতে, লোকচক্ষুর আড়ালে কত অন্যায়ই করি যার প্রমাণ নেই। কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে কি মাফ পাই? পাই না।
মানুষ হিসেবে আমার অপরাধ সমূহ উত্তম পুরুষের জবানীতে লেখা। কেন্দ্রীয় চরিত্র আনিস৷ যার জীবনের কিছু অপরাধ বর্ণিত হয়েছে৷ আনিস একজন সরকারি কর্মচারী। বন্ধুর মৃত্যুর পর বন্ধুর বিধবা বউ ডলিকে বিয়ে করে।
ডলির প্রবাস থাকাকালীন আনিস অল্প বয়সী এক তরুণীর প্রেমে পড়ে। গড়ে ওঠে প্রেম- প্রণয়৷
নিজের অপরাধের সহজ স্বীকারোক্তি 'মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ'।
৩১. পিতৃগণ
লেখক - জাকির তালুকদার
পিতৃগণ বইটি বাঙালিদের অর্জনের ইতিহাস, তাদের স্বাধীনতার ইতিহাস।
লেখক চেয়েছেন এই ইতিহাসকে পুনর্নিমান করতে।
কয়েক হাজার বছর আগে বরেন্দ্রভূমির ভূমিসন্তানরা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এই স্বাধীনতা।
পাল রাজাদের কাছ থেকে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন কৈবর্ত সম্প্রদায়।
এরাই ছিলেন সমাজের লাঞ্চিত শ্রেণির মানুষ।
লেখক যে কী পরিমাণের জানাশোনা আর পড়াশোনা করেছেন তা পিতৃগণ পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে রীতিমতো গবেষণা এই পিতৃগণ।
বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র পপীপ৷ যে একজন কবি এবং কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোক। পপীপের হাত ধরেই আমাদের প্রায় ভুলতে বসা ইতিহাস দেখিয়েছেন ।
৩২. সাদাত হাসান মান্টোর শ্রেষ্ঠ গল্প
অনুবাদক - জাফর আলম
একজন নারীর সক্ষমতা, যোগ্যতা মাপি কিসে?
একজন মেয়ে রিক্সা চালাচ্ছে কিংবা ঘোড়ার গাড়ি টেনে জীবিকা নির্বাহ করছে এমনটা সহজে মানতে পারি না৷
এসমস্ত বাধ্যবাধকতার লাইসেন্স পুরুষতান্ত্রিক সমাজই আমাদের দিতে পারে৷
মান্টোর লাইসেন্স গল্পে দেখতে পাই সদ্য বিধবা নারী নীতি।
কেচোয়ান স্বামীর মৃত্যুর পর তার ঘোড়া নিয়েই যখন উপার্জনে বের হয় তখন বিষয়টা কেউ যেনো মানতেই পারছিলো না।
নীতির কাছে লাইসেন্স চায় তারা। যে লাইসেন্স ছাড়া সে আর রাস্তায় গাড়ি টানতে পারবে না৷
নারী বলেই হয়ত লাইলেন্স দেওয়া হয় না।
কিন্তু দেহকে বিক্রি করতে কোনো লাইসেন্স লাগে না। এই উপার্জনে কারো বাধ্যবাধকতা থাকে না। কেউ ঘোড়ার গাড়ি চালানো দেখে অবাক হবার মত করে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, কেউ বলেনা মেয়ে মানুষদের এই কাজ করার লাইসেন্স নাই।
একদম গভীরে দাগ কেটে যাবার মত গল্প।
অল্প বাক্যে এত গভীর বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন।
বইটিতে ১২ টি গল্প দেওয়া আছে।
অর্ধেক নারী, নয়া কানুনসহ সব গল্পই ভালো লেগেছে।
মান্টোর লেখা আমার প্রিয় গল্প ঠান্ডা গোশত , খুল দো ।
৩৩. ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট (অনুবাদ - অপরাধ এবং শাস্তি)
লেখক - ফিওদর দস্তয়ভস্কি
অনুবাদ - সৈয়দ হালিম
অনেক অন্যায়ে আমি আমরা শিহরিত হয়ে ভাবি, এমন কাজ সে কীভাবে করতে পারে?
আসলে সে এই কারণেই পারে যে, তার কাছে অপরাধ বলেই মনে হচ্ছে না।
বইয়ের মূল চরিত্র রাসকলনিকভ।
যে খারাপ অবস্থায় খুন করতে বাধ্য হয়। আর্থিক দৈন্যতায় যেনো এছাড়া উপায় ছিল না।
এমনভাবে খুন করে যে প্রমাণও পাওয়া দুষ্কর । কিন্তু নিজের অপরাধবোধ তাকে কুড়েকুড়ে খেতে থাকে৷
আর্থিক দৈন্যতা, ক্ষুধা, অভাব মানুষকে খুনী বানায়৷ আমরা অপরাধীকে দেখি কিন্তু একজন মানুষ কীভাবে অপরাধী হয়ে উঠছে সেটা মুদ্রার আরেক পিঠে যেন অদেখা থেকে যায়।
ক্ষুধা যেনো সকল নৈতিকতাকে পিষে মারে।
সমাজের আরেক শ্রেণি খাবার ফেলে দেয়!
কেউ সেই খাবার ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে খায়। এভাবেই যেনো চলে আসছে শ্রেণি বৈষম্য।
৩৪. শয়তান
লেখক - লিও টলস্টয়
লেখকের জীবনে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার প্রেক্ষিতে লিখে ফেলেন বইটি।
সত্যিটা হলো কেউই শতভাগ বিশুদ্ধ না। তবুও আমরা অন্যদের সামনে তুলে ধরি নিজের দোষ ত্রুটিকে আড়ালে রেখে। আমাদের সকলের মাঝে যে পাপাচারের বাসনা রয়েছে তা প্রায়শই জেগে ওঠে। আমরা মনে মনে যুদ্ধ করি এই কাম বাসনার সাথে। কখনো দমন করতে পারি কখনো পারিনা।
বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইউজিন।
এছাড়াও দুটি নারী চরিত্র আছে।
ইউজিন বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত জমিদারি দেখাশোনা করেন। সম্মতিতে অর্থের বিনিময়ের চাষীর বউ স্টিপানিডার সাথে দৈহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন।
এক সময় প্রেমে পড়ে যান স্টিপানিডার।
নিজেকে এসব থেকে মুক্ত করতে এবং জীবনকে গুছিয়ে তুলতে লিজাকে বিয়ে করেন।
লিজা একজন আদর্শ বউ। ইউজিনের প্রতি স্বামীভক্তির কোনো কমতি রাখতো না।
কিন্তু প্রচ্চন্ড লাস্যময়ী স্টিপানিডার থেকে নিজেকে সংযত রাখাটা কষ্টকর ইউজিনের পক্ষে।
একদিকে আদর্শ স্ত্রী আরেকদিকে কাম, আবেদনময়ী স্টিপানিডা।
ইউজিন কি পারবে আদর্শ স্ত্রীর জন্য স্টিপানিডার প্রতি প্রেমকে দূরে ঠেলতে?
মনের এই শয়তানকে কি দমিয়ে রাখতে পারবে?
প্রবল অপরাধবোধ থেকে প্রতিনিয়ত মুক্তির পথ, আত্মশুদ্ধির উপার খুঁজতে থাকে ইউজিন।
নিজেকেই ধীক্কার জানায়।
এই পাপাচার থেকে শুদ্ধির উপায় হয়
১. আত্মহত্যা
না হয়
২. স্টিপানিডাকে খুন।
কোনটা বেছে নিবে ইউজিন?
বইতে উপসংহার আছে দুইভাবে।
৩৫. দি আউটসাইডার
লেখক - আলবেয়ার কাম্যু
অনুবাদক - মুনতাসীর মামুন
সমাজের নানা অস্থির অবস্থার মধ্যে থেকে আমাদের মন বিষিয়ে ওঠে, আমরা মুক্তি চাই এসব থেকে।
এই জটিল, নিষ্ঠুর সমাজে না পারি চুপ থাকতে না পারি বদলাতে। এই জটিল বিষয়গুলোকেই কাম্যু আউটসাইডার মনে করেন।
কেন্দ্রীয় চরিত্র মারসো আমাদের মত ভণিতা করতে জানেন না। কারো বকবকানিতে তীব্র বিরক্ত হয়েও আমরা হাসি হাসি মুখ করে শুনি কিন্তু মারসো পারেন না।
ঈশ্বরকে নিয়ে যার মাথাব্যথা নেই, যে খুনের আসামী হয়েও শেষ সময়টায় ধর্মকর্মে নষ্ট করতে চায় না।
খুনের আসামী হয়েও স্বপক্ষে কোনো উকিল রাখতে চায় না। সবকিছুই কেমন যেন অর্থহীন।
মায়ের মৃত্যুতে কাঁদেও না।
কিন্তু সমাজ চায় মারসো কাঁদুক, মিথ্যে করে হলেও, ভণিতা করে হলেও।
৩৬. অগ্নিরথ
লেখক - সমরেশ মজুমদার
এই দুনিয়া কতটা নশ্বর তা বুঝাতেই হয়ত বলা হয় দুই দিনের দুনিয়া।
এই ক্ষণস্থায়ী মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান কতটা জুড়ে! তবুও আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করতে পারি না৷
জীবনের হাজারো কষ্টের মাঝে তবুও বেঁচে থাকার তাগিদ।
যখন একজন মানুষ বুঝতে পারে তার আয়ু বেধে দেওয়া এবং মরণব্যাধি তাকে নিয়ে যাবে খুব শীঘ্রই তখন হঠাৎই যেনো জীবনের প্রতি টান বেড়ে যায়৷ এমনই এক চরিত্র সায়ন। যে তার মরণব্যাধি চিকিৎসা করতে দার্জিলিং যায়। পাহাড়, ঝর্ণার অপূর্ব সৌন্দর্যের মাঝে চিকিৎসা করে এক বড় মনের ডাক্তার।
সায়নের লিউকেমিয়া রোগ ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে, সমস্ত ডাক্তারি বিদ্যা দিয়ে৷
সবার উপরে মানুষই সত্য, এর উপরের আসলেই যেনো কিছু নেই।
জাত পাতের উর্ধ্বে মানুষ পরিচয়ই প্রধান হয়ে উঠুক। এটাই প্রত্যাশা।
যেমন একজন ডাক্তারের কাছে সব রোগীই সমান হওয়া উচিত, শ্রেণী -ধর্ম - বর্ণ গুরুত্বপূর্ণ নয়৷
৩৭. আবে হায়াত
লেখক - আবুল মনসুর আহমদ
‘আবে হায়াত’ অর্থ জীবন পানি, অমৃত বারি, সঞ্জীবনী সুধা।
এমন এক ঝর্ণা যে ঝর্ণার পানি খেলে অমরত্ব লাভ করা যায়, মৃত্যু ছুঁতে পারে না যে পানি খেলে।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হামিদ সেই সুধা পান করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
অমরত্ব লাভের এই বারির খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে দিকবিদিক ঘুরে বেড়ায়৷
কিন্তু সত্যিকার অর্থেই আবে হায়াত খুঁজে পায়।
যা আমাদের জানা সেই ঝর্ণার পানি নয়। এ এক অন্য আবে হায়াত, এ এক অন্য সঞ্জিবনী বারি৷
লেখকের আবে হায়াত বইটি ধর্মব্যবসা সমাজের কুসংস্কার, কট্টরপন্থী ধার্মিকতা, ভাওতাবাজি ফুটিয়ে তোলে৷
নায়ক একটি পীর বংশে জন্ম নেয়৷ যেখানে তাদের জল্পনাকল্পনাও ছিলো সে হবে ভবিষ্যৎ পীর, যে এই পীরব্যবসা সামনের দিকে টানতে থাকবে, নিয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতে বংশপরম্পরায়৷
কিন্তু হামিদ শিক্ষা, জ্ঞানের সংস্পর্শে আসে এবং এসব ভাওতাবাজি একে একে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে৷
বইটির ক্যাটাগরি এক শব্দে বোঝানো যাবে না।
ধর্মীয় কুসংস্কার, প্রেম, জীবনের উত্থান পতন, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি সকল বিষয়ের বই আবে হায়াত।
৩৮. ব্লাসফেমি
লেখক - তেহমিনা দুররানি
অনুবাদক - সা'দ উল্লাহ
সত্য কাহিনী নির্ভর উপন্যাস ব্লাসফেমি।
সত্য কোনো ঘটনাকে গল্পে রূপ দেওয়া বেশ কঠিন।
যখন আমি লেখক তখন আমি গল্পের চরিত্রের স্রষ্টা । আমি চাইলেই মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারি কারণ কলকাঠি আমার হাতে। কিন্তু আত্মজীবনী, সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত উপন্যাসে গল্পের ছলে সত্যি বলতে হয় অকপটে ।
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কেন্দ্রে আছে হীর নামে একজন মেয়ে। যে পীরের নজরে পড়ে।
সমাজের পর্দার আড়ালে, মুখোশ পরিধান করে, সুন্নতি লেবাসের অন্তরালে কী ঘটে যায় তাই দেখানো হয়েছে৷ বিচক্ষণতার সাথে সরলমনা মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে তারা চালাতে থাকে অন্যায়। এমনই এক পীর হীরকে বিয়ে করে। বিয়ের পর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন।
বইটি পড়ে অবাক না হয়ে পারা যায় না। একজন পীরের বেশে নিজের স্ত্রীকে দিয়ে করানো হয় বেশ্যাবৃত্তি । এ যেনো লালসালু, আবে হায়াত উপন্যাসের পীর চরিত্রেরই আরেক রূপ।
৩৯. দ্য লাস্ট গার্ল
লেখক - নাদিয়া মুরাদ
অনুবাদক - হাসান বায়েজীদ
ইতিহাসে যত যুদ্ধই রয়েছে সেসবই পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়েছে৷
আইসিসরা কুর্দিদ ভাষাভাষী সকল ইয়াজিদিদের উপর যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় তার একটি দলিল 'দ্য লাস্ট গার্ল' যা মূলত নাদিয়া মুরাদের জবানবন্দি।
ভাষ্যমতে, নাদিয়ার ছয় ভাই সহ হাজার হাজার ইয়াজিদি যুবককে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে, নাদিয়ার মা সহ ৮০ জন বৃদ্ধাকে খুন করে মাটিচাপা দেওয়া হয়, নাদিয়া সহ অসংখ্য বন্দী নারীকে দাসী করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয়৷ পালাক্রমে ধর্ষণে মেতে উঠতো তারা। জ্ঞান হারিয়ে ফেলত তবুও তাদের ধর্ষণ যেনো থামতোই না।
নাদিয়াকে যৌন উত্তেজক জামা পরতে বাধ্য করা হত।
এসব লোমহর্ষক ঘটনা পড়ার সময় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না এসমস্তই বাস্তব, কোনো কল্পকাহিনী নয়।
আইসিসরা এসব করার পরেও নিজেদের কাজকে বৈধ মনে করতো৷ পেশ করতো 'রিসার্চ এন্ড ফতোয়া বিভাগ' র দেওয়া বয়ান৷ যেখানে মনে করা হয় কুর্দিদদের যেহেতু ধর্মগ্রন্থ নেই তাই তারা নাস্তিক৷ আর নাস্তিকদের অত্যাচার করা শরীয়া বিরোধী তো নয়ই।
নাদিয়াকে ' ঘৃণ্য নাস্তিক' বলে তারা সম্বোধন করত।
এ ছিলো নৃশংসতার সর্বোচ্চ ধাপ!
৪০. বিষফোঁড়া
লেখক - সাইফুল বাতেন টিটো
আমরা যখন এই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে ভাবনার বিঘ্নতা ঘটিয়ে বই নিষিদ্ধ করি তখন আনমনেই জিজ্ঞাসা আসে, ইসলাম কি শিশুধর্ষণ বৈধ করে?
উত্তর হবে, অবশ্যই না৷। কিন্তু উত্তর যদি না'ই হয় তবে কেনো এই বিষয়ে কথা বলা যাবে না? লেখা যাবে না?
আমরা বর্তমানে বেশ কিছু ঘটনার বিষয়ে জানি।
একটা শিশু কাঁদছে আর বলছে, তাকে কিভাবে ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে ধর্ষণ করেছিল, পরের দিন ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট কিনে দিয়েছিল মাদ্রাসার হুজুর৷ পাশাপাশি এও বলেছিলো, কাউকে বলা যাবে না।
বইটি সেসব নির্যাতিত শিশুদের আহাজারি, কষ্টের প্রতীক।
বইয়ের ভিতরে এক জায়গায় বলা আছে, হুজুরদের আলোচনা, বয়ানের মূল বিষয় থাকে নাস্তিকতা, নাস্তিকদের নিয়ে৷
কিন্তু স্রষ্টায় বিশ্বাস আর অবিশ্বাস একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় বলে আমি মনে করি।
জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা নিয়ে, আরো অনেক বিষয় নিয়ে কথা তারা বলে না। এজন্যই আমরা এত কঠিন, কঠোর প্রজন্ম পাচ্ছি যারা অভিজিৎ রায়, হুমায়ুন আজাদের মত ট্যালেন্ট পারসনকে আক্রমণ করে।
উদার আমরা যেন হতেই পারি না, অন্যের মতামত, চিন্তা, আদর্শকে সম্মান করতেই জানিনা। বিপরীতে বইতে দেখতে পাই, নাস্তিকদের গালি দেওয়া হচ্ছে নাস্তেক বলে।
পরিশেষে আমার মতামত, এই শিশু নির্যাতনের বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। নইলে শিশুধর্ষণ বাড়তেই থাকবে।
৪১. STEAL LIKE AN ARTIST
লেখক - AUSTIN KLEON
আমরা কথা বলতে, লিখতে, বেশভূষায়, চলনে-বলনে যেমন প্রকাশ করি তা কি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ?
না... আমরা কোনো না কোনো ভাবে কারো দ্বারা প্রভাবিত হই। কখনো চেতনে কখনো বা অবচেতনা। যাদের কথা বলার ধরণ আমাদের ভালো লাগে অথবা আমার সান্নিধ্যে যারা আছেন তাদের সকলের কথা বলার ধরণ নিজের মধ্যে চলে আসে। এতজনের ধরণ একত্রিত হয় যে আলাদা করে আর বলা সম্ভব হয় না, সে অমুককে ফলো করে।
আমরা যারা পাঠক তারা বলে থাকি অমুক লেখক তমুক লেখকের দ্বারা প্রভাবিক। আসলে এই প্রভাব বিষয়টা খারাপ না৷ আমরা সবাই আলাদা সত্ত্বা।
এইত গেলো একটা আইডিয়া।
এছাড়াও আরো ১০ টি আইডিয়ার বলা আছে চুরি করার! মানে শৈল্পিকভাবে চুরি করার যাকে আর চুরি সম্বোধন করা যায় না।
৪২. রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড
লেখক - রবার্ট টি কিয়োসাকি
একজন মধ্যবিত্তের এবং গরীবের সাথে ধনীর মূল পার্থক্য মানসিকায়।
এই মানসিকতাই মধ্যবিত্তকে বংশানুক্রমে মধ্যবিত্ত রাখে। আমরা দেখিয়ে দেওয়া রাস্তা, শিখিয়ে দেওয়ার বুলির বাইরে নতুন করে ভাবতে জানি না।
যেজন্য একজন ধনী ধনী হতে থাকে, গরীব গরীবই থেকে যায়।
টাকার অভাবে অনেক সুখ কিনতে পারি না। মনকে বুঝ দেই এই জিনিস আমাদের জন্য না।
কিন্তু আয় করতে পারি আমরা চাইলেই।
ধনী বাবারা তাদের বাচ্চাদের কী শেখায় যা গরীব বাবা শেখায় না?
এমনই প্রশ্ন ধরিয়ে দেয় আমাদের। যার উত্তর খুঁজতে হয় বইয়ের পাতায়।
আমাদের ইচ্ছা শক্তি, চিন্তার ধরণ বদলালেই এমন কিছু সম্ভবপর হয় যা ভাবি এটা সম্ভব নয়।
তিনি মনে করেন, সঠিক পথে চিন্তা, মানসিক শক্তি আর পরিশ্রম থাকলেই যে কারো পক্ষেই ধনী হওয়া সম্ভব।
৪৩. উচ্চাকাঙ্খার ম্যাজিক
লেখক - ডেভিড জোসেপ শার্টজ
সফলতার কোনো মন্ত্র তন্ত্র হয়না কারণ সফলতার কোনো শর্টকাট রাস্তাই নেই।
বইয়ে ৪৮ টি মন্ত্র (চিচিং বিচিং ফু' এমন কিন্তু না ) দেওয়া আছে যা ধরে আগালে সফলতা পাওয়া ঠেকায় কে!
প্রতিটা মন্ত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ গল্প দেওয়া আছে। কিছু পৌরানিক কিছু ঈশ্বপের গল্প। পড়তে ভালো লেগেছে তবে মনে হয়েছে একজন মানুষকে বেশি আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর হতে বলা হচ্ছে ঘুরিয়ে পেচিয়ে।
এমন যে, হয় তুমি মই বানাও কাউকে নইলে মই হতে হবে তোমাকে!
তুমি ব্যবহার করো কাউকে, না করতে পারলে ব্যবহার হতে হবে তোমাকেই!
কেমন যেনো একটা ধোয়াশা, ছদ্মবেশ ধারণ করার ইঙ্গিত দিচ্ছে মনে হয়েছে৷
মুখে মধু রেখে নিজের কাজ হাসিল করতে হবে। মূলকথা এমন যে আমাকে সফল হতে হবেই যা কিছু হয়ে যাক!
৪৪. ইট দ্যাট ফ্রগ
লেখক -ব্রায়ান ট্রেসি
আমাদের প্রতিদিনের কঠিন কাজকে সবার প্রথমে করতে হবে। মনে করতে হবে কঠিন কাজটি ব্যাঙ। যদি একটি ব্যাঙ আমাদের খেতে হয় তাহলে বেশি সময় নিলে ব্যাঙটি লাফিয়ে চলে যাবে। খাবো কি খাবো না, পরে খাবো, খেতে মজা লাগবে না ইত্যাদি ভাবতে ভাবতেই ব্যাঙ নাই হয়ে যাবে, পরে আর খাওয়াই হবে না।
যা কিছু কঠিন সেসব কাজ পরে করব বলে রেখে দিলে আর করা হয়ে ওঠে না।
যেসব কাজ করতে হবেই কিন্তু করতে ইচ্ছা করে না সেসব ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা আমার কাজে দেয়।
কাজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হতে হবে, কাজকে ভালোবাসতে হবে।
যে কাজের প্রতি আন্তরিক না সেই কাজ ভালো হওয়াও সম্ভব না।
বইটি কর্মস্থলেও সক্রিয় এবং কর্মঠ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
৪৫. পৃথিবীর শেষ কমিউনিস্ট
লেখক - নবারুণ ভট্টাচার্য
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না অথবা সমাজবিরোধী কবিতার মত কবিতা হয়ত নবারুণ ভট্টাচার্যের পক্ষেই লেখা সম্ভব।
প্রতিটা লেখকের যেনো লেখার একটা স্বকীয়তা থাকে যে লেখা পড়লে লেখকের নাম দেখার আগেই বলে ফেলা যায়, হ্যাঁ, এ তো ওনার লেখা!
৯/১১..., গুপ্তঘাতক, চীন ২০০২, নেকলেস নিয়ে লেখেছেন।
সবশেষে, পৃথিবীর শেষ কমিউনিস্ট।
মূলত এই নামানুসারেই বইটির নাম।
তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন, সারা দুনিয়া জুড়ে কমিউনিস্টরা ফিরে আসবেন, তবে তার জন্য আগামী সতের বছর বা তারও বেশি সময়ের প্রত্যেকটা ঘন্টা ও প্রত্যেকটা মিনিট কাজে লাগাতে হবে । সারা পৃথিবী জুড়ে কমিউনিস্টরা ফিরে আসবে। আসবেই। আর দশ নয়৷ দশ হাজার দিন ধরে দুনিয়া কাঁপাবে।
এই কথাই তিনি এই গল্পে জানিয়ে দেন।
৪৬. মার্ক্সবাদী দৃষ্টিতে 'শ্রেণী' : কয়েকটি কথা
লেখক - প্রভাত পট্টনায়ক
মার্ক্সবাদের অন্তর্ভুক্ত মানুষ ও প্রকৃতির দ্বান্দ্বিক সম্পর্কেরই অবমূল্যায়ন ঘটায় । কমিউনিস্ট ইস্তেহারের তুলে ধরা বিচারবাক্যের আলোচনা হয়েছে। শ্রেণী ধারণা বিষয়ে সম্যক আলোচনাও আছে। লেখকের মতে, বিভিন্ন বিচার সূত্রে শ্রেণী মাত্র একটি ক্যাটাগরি কিন্তু কেন তাকে অন্য সমস্ত ক্যাটাগরি থেকে পৃথক করে নিয়ে তাকে উর্ধ্বে স্থান দিব? কেন তারা কেবল মার্ক্সবাদীদের দ্বারা নির্দেশিত বিশেষ ধরণের শ্রেণী ভূমিকাই পালন করে যাচ্ছে৷
এসমস্ত অনেক বিষয় উঠে আসে ছোট্ট এই বইতে।
৪৭. ছোটদের রাজনীতি ছোটদের অর্থনীতি
লেখক - অধ্যাপক নীহার কুমার সরকার
বইটার নাম দেখে পড়তে নিয়ে থমকে গিয়েছিলাম। পড়া শুরুর আগে ভেবেছিলাম ছোটদের ব্যাপার স্যাপার হবে হয়ত৷
পুঁজিবাদ কী, পুঁজিবাদের ফল নিয়ে আলাপ করতে করতে যেনো জটিল বিষয়ে আমি প্রবেশ করতে থাকি৷ শেষ হয় বিশ্ব রাজনীতির মত কঠিন বিষয় দিয়ে।
ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে মুখে ব্রাশ নেবার মত দৈনন্দিন কাজে আমরা রাজনীতি খুঁজতে যাই না,
এখানেও পুঁজিবাদ আছে ভাবি না।
এই সহজ উদাহরণ দিয়ে, সাবলীল ভাবে কঠিন বিষয় তুলে ধরেন বলেই হয়ত বইয়ের নাম 'ছোটদের রাজনীতি ছোটদের অর্থনীতি'।
৪৮. নারী-পুরুষ সম্পর্ক ধর্ম ও মার্ক্সবাদ
লেখক - মঈনুদ্দীন আহমদ
বইতে দেওয়া রবীন্দ্রনাথের কবিতাংশ -
নাস্তিক সেও পায় বিধাতার বর
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর।
শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো
শাস্ত্র মানে না, মানে মানুষের ভালো।
জীবনেই যখন ঈশ্বরের কোনো সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না তখন মৃত্যুর পর তাকে সেই কাল্পনিক ঈশ্বরের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই বলে মনে করেন।
এছাড়াও কিছু প্রশ্নোত্তরে সোভিয়েত, কমিউনিজম, ধর্ম, নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা আছে।
অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের তুলনামূলক অবস্থান তুলে ধরেন।
নারী পুরুষ সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক প্রয়োজন মেটাবার অদম্য তাগিদ থেকে পরস্পরের মধ্যে যে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে তা মূলত একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। একটি শ্রেণী বিভক্ত সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে বুঝতে হলে ও তা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে শ্রেণী সম্পর্ককে পাশ কাটিয়ে করা কখনোই সম্ভব নয়। সেজন্যই এই যৌনতাকে হিসেবের মধ্যে না নিয়ে নারী-পুরুষ সম্পর্ক বিবেচনা করাও সম্ভব নয়।
৪৯. ইকোফেমিনিজম নারীবাদ ও তৃতীয় দুনিয়ার প্রান্তিক নারী
লেখক - বিপ্লব মাজী
লিবারেল নারীবাদীরা মনে করেন যেকোনো ধরণের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষায় নারীরই ভূমিকা প্রধান। এক্ষেত্রে কিন্তু নারীর সমস্যা আরো বাড়ে, পাশাপাশি বাড়ে দায়িত্বও।
একটি নির্দিষ্ট তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে নারী আন্দোলন হয় না৷ দেশ, কাল, পরিবেশভেদে নারী আন্দোলন গুলোর ভিন্নতা, বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা যায়।
এই ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় সময়/ কাল অনুযায়ীও৷
যেমন, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ।
আধুনিক নারী আন্দোলনের রূপ কেমন তা উঠে এসেছে।
এছাড়াও সিমোন দ্য বোভোয়ারের নারীবাদ ও আদর্শ মানব কল্পনা, যুদ্ধ ও মেয়েরা, ইকোফেমিনিজম বা মানবী নিসর্গবাদ নিয়ে কথা বলেছেন।
৫০. দ্বিতীয় লিঙ্গ
লেখক - সিমোন দ্য বোভোয়ার
অনুবাদক - হুমায়ুন আজাদ
ফরাসি নারীবাদী দার্শনিক সিমোন দ্যা বোভোয়ারের ১৯৪৯ সালের প্রকাশিত গ্রন্থ দ্য সেকেন্ড সেক্স যা দ্বিতীয় লিঙ্গ নামে হুমায়ুন আজাদ ২০০১ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন এছাড়াও আরো অনেক ভাষায় অনুদিত হয়।
বইটি পড়ে মনে হয়েছে নারীবাদের শক্ত এক আসন গেড়ে আছেন সিমোন দ্য বেভোয়ার।
যখন থেকে মানুষ পরিচয়ের বদলে নারী পুরুষ শ্রেণীতে ভাগ করে ফেললাম তখন থেকেই বৈষম্যের শুরু।
সিমোনের সেই কালজয়ী লাইন মনে পড়ে গেলো,
' কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং নারী হয়ে ওঠে'।
কীভাবে একজন মানুষ তার মানুষ পরিচয়ের বাইরে ধীরে ধীরে একজন নারী হয়ে ওঠে?
এক্ষেত্রে বড় প্রভাবক পরিবার।
পরিবার যদি একই দৃষ্টিকোণ, একই সুযোগ সুবিধা, একই শিক্ষায় একজন ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশুকে বড় করে তোলেন নারী ও পুরুষ বেড়েও উঠবে একই ভাবে এবং নারী পুরুষ পরিচয়কে তারা ছাপিয়ে উঠতে শিখবে৷
আমরা ছেলে সন্তানকে বেশি সুযোগ সুবিধায় গড়ে তুলি৷ তবুও মেয়ের সীমাবদ্ধতাকে কটাক্ষ করি৷ চোখে আঙুল দিয়ে বলি, দেখো তুমি এই পারো না যা সে পারে।
ছেলে শিশুর ডানায় যত্ন করে এবং মেয়ে শিশুর ডানা কেটে দিয়ে বলা হয়, তুমি উড়তে কেনো পারোনা?!
একজন নারীর জীবন, জীবনে চলতে সামাজিক এবং পারিবারিক বিপত্তি, নারীর মনস্তাত্ত্বিক দিক সবটাই যেনো উঠে এসেছে সিমোন দ্য বেভোয়ারে কলমের ডগায় এবং দ্য সেকেন্ড সেক্স বইয়ের অনুবাদ দ্বিতীয় লিঙ্গ বইতে।
মন্তব্যসমূহ
অনেক দিন বই পড়া হয় না_
আপনাকে সাধুবাদ।
ধন্যবাদ পাঠের জন্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন