জন্মদানবিরোধ - ১ . (সিরিয়ার বিখ্যাত কবি ও মুক্তচিন্তক 'আবু আল আ'লা আল মা'রি'র কবরে স্বরচিত বাক্যে লেখা সমাধিলিপি!) . সমাধালিপিটিতে লেখা আছে, هذا جَنَاهُ أبي عليَّ وَمَا جَنَيتُ عَلَى أَحَدِ যার অর্থ হচ্ছে, 'এই অপরাধ (জন্ম দেয়ার) আমার বাবা আমার প্রতি করেছিল, কিন্তু আমি কারো প্রতিই করিনি(কাউকে জন্ম দিইনি)! . আরবের কবিতা ও মুক্তচিন্তার ইতিহাস যারা জানেন তাদের কাছে 'আল মা'রি'কে নতুন করে পরিচয় করাতে হবে না। কিন্তু এ লেখায় আলোচ্য কেবল তার 'জন্মদানবিরোধ'! আবু আল মা'রি মনে করতেন জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণা এড়াতে সন্তান জন্মদান করা উচিত নয়। তাঁর সমাধিলিপির কথাগুলোতে মনে হতে পারে তিনি বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু তা মোটেও নয়। তাঁর বাবার মৃত্যুতে শোকাহত কবি রচিত শোক-কবিতা বাবার প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ। তাই তার সমাধিলিপির মূল বক্তব্য আসলে, 'সন্তানকে যন্ত্রণার জীবন দেয়া অপরাধ, অনৈতিক।' ব্যক্তিগত জীবন ও লেখায় নৈতিকতা ও যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া, নির্লোভ (তাঁর কবিতা বিক্রি করে ধনী হতে নারাজ ছিলেন) চিরকুমার এই কবির ভাষায় তাঁর জীবনের দুটি বন্দিশাল...
একজন আশাবাদী এটা ভাবতে পারেন যে, জীবদ্দশায় তার সাথে খারাপ কিছু ঘটবে না। অপরদিকে একজন হতাশাবাদী বিশ্বাস করতে পারেন যে, তার সাথে খারাপ কিছু ঘটবে। তাদের মতামত, চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন হলেও তারা দুজনই কিন্তু এই বিষয়ে একমত যে- পৃথিবীতে খারাপ ঘটনা ঘটে আর সে ঘটনাগুলো ভয়ংকর! ঘটনাগুলো তার সাথে ঘটবে কি-না সে বিষয়ে তারা ভিন্নমত হলেও খারাপ ঘটনা কারো না কারো সাথে ঘটে এই বিষয়ে একমত তারা। আপনি যদি বাইরে যাওয়ার আগে ভাবেন বৃষ্টি আসার সম্ভাবনাই বেশি বৃষ্টি না আসার চেয়ে তবে নিশ্চয়ই আপনি কম সম্ভাবনাকে ধরে নিয়ে ছাতা রেখে যাবেন না। ভালো বা খারাপ ঘটনার যেকোনো একটিই তো ঘটবে। মাঝামাঝি বলে তো কিছু হয় না। তবে যদি খারাপ দিকটা বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তবে কি তাকে আপনি হতাশাবাদী বলবেন? 'উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের গড় আয়ুকে বৃদ্ধি করবে' এই ভেবে আপনি আশাবাদী হতে পারেন। তবে আপনাকে ভুললে চলবে না যে, উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতি মৃত্যুর তারিখ পেছাতে পারলেও মৃত্যুকে আটকাতে পারবে না। (আর অমরতা ভালো কিছুও না।) আপনি অপরের কষ্ট দেখে নিজে এরচেয়ে ভালো আছেন ভেবে সুখের ভ্রমে থাকতে পারেন। তবে আপনি জানেন কি?...
অনেকের মত আমারও ইচ্ছে হয় সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে কোথাও চলে যেতে। প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতার মত বলতে ইচ্ছা হয়, সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাবো শুভা! কিন্তু পারি না। একই সাথে যদি থাকতে এবং চলে যেতে পারতাম! আমরা অনেক সময় বলি, আমি স্বাধীন এবং যখন যা মন চায় তাই করি। কিন্তু আমি একই সাথে কোথাও যাবো আবার এখানেই থাকবো এমনটা করতে পারবো? কিছু খাবো আবার খাবো না একই সাথে? কিংবা এই বইটা পড়বো আবার পড়বো না? আসলে সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। স্রষ্টা সব পারেন যদি ধরে নেই তবুও তিনি এমন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না যা তিনি নিজে ধ্বংস করতে পারবেন না! এই সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আমার আর হারিয়ে যাওয়া হয়না। যদিও মুখে বলি, কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা। সমাজ, পরিবার, ধর্মের বেড়াজাল থেকে পালাতে যেয়ে স্বপ্নে কখনো আরশোলা কিংবা গুবরেপোকা হয়ে যাই! যেখানে আমি থাকি অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের মাঝামাঝি! কাফকার মেটামরফোসিসের গ্রেগর স্যামসার মত ছটফট করতে থাকি। কিন্তু বেমালুম নাই হয়ে যাই সবার মাঝখান থেকে। আমার শূন্যতা কিছুটা খালি তো করবেই তবুও তা কতদিন...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন