পোস্টগুলি

ভাবানুবাদ

ছবি
"স্বর্গ এবং সুখের অস্তিত্ব নেই। আপনাকে এই পৃথিবীতে আনার অপরাধকে ন্যায়সঙ্গত করতেই আপনার মা-বাবা এগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। যা আছে তা হলো বাস্তবতা, কঠিন বাস্তবতা! এই কসাইখানায় আমরা মরতে এসেছি, যতদিন না মরি ততদিন আমাদের অধীনস্থ প্রাণীদের হত্যা করে খেয়ে বাঁচতে হবে। সুতরাং, জন্ম দিবেন না । যে অন্যায় আপনার সাথে করা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি করবেন না । অন্যায়ের জবাব অন্যায় করে দিবেন না, যেহেতু জীবন দেওয়া চরমতম অন্যায় । যারা জন্ম নেয়নি তাদের শান্তিভঙ্গ করবেন না, তাদেরকে অস্তিত্বহীনতার শান্তিতে থাকতে দিন । আমাদের সবাইকে একদিন সেই অস্তিত্বহীনতায় ফিরে যেতেই হবে, তাহলে কেন শুধুশুধু কাউকে অস্তিত্বের যন্ত্রণা দেওয়া ? (মূল - FERNANDO  VALLEJO পরের প্যারার অনুবাদ করেছেন শামস অর্ক)

গান ভাবানুবাদ

মহল, সিংহাসন, মুকুটের (ক্ষমতাবানদের) এই দুনিয়া, মানুষের শত্রু সমাজের এই দুনিয়া, সম্পদের দিকে মুখিয়ে থাকার স্বভাব এই দুনিয়ার। এই দুনিয়া পেয়ে গেলেই বা কী হবে? প্রতিটা শরীরই বিধ্বস্ত, প্রতিটি হৃদয়ই তৃষ্ণার্ত। চোখেতে বিভ্রান্তি, হৃদয়ে বিষাদ! এটা কি দুনিয়া নাকি অন্য কিছু? এই দুনিয়া পেয়ে গেলেই বা কী হবে? এখানে মানুষের অস্তিত্ব খেলনা, মৃতদের পূজারক এই দুনিয়া!  (সকল পূজা, মূর্তি,  অশ্রু মৃতদের জন্য) এখানে জীবনের চেয়ে মৃত্যু সস্তা।  এই দুনিয়া পেয়ে গেলেই বা কী হবে? যুবকরা অতৃপ্ত আত্মার মত ছোটাছুটি করে পাপের অলিগলিতে। যুবতীরা নিজেকে সাজায় বাজারে পণ্য করতে! যেখানে প্রেম-ভালোবাসা কেবলই লেনদেন। এই দুনিয়া পেয়ে গেলেই বা কী হবে? এটা এমনই এক দুনিয়া যেখানে মানুষের মূল্য নেই, ভরসা বলতে কিছু নেই, বন্ধুত্ব বলতে কিছু নেই! যেখানে ভালোবাসার কোনো মূল্যই নেই। এই দুনিয়া পেয়ে গেলেই বা কী হবে? জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও এই দুনিয়া, আমার সামনে থেকে সরাও এই দুনিয়া, তোমাদের দুনিয়াতে তোমরাই থাকো। মূল - শাহির লুধিয়ানভি

অগোছালো চিন্তাগুলো

কেউই তো জীবনের কষ্ট লাঘব করে না  কিন্তু সবাই মরতে বাধা দেয়! কেউই তো চায় না পাশে থাকতে কেবল চায় পাশে রাখতে! আর এই স্বার্থের নাম দেয় ভালোবাসা! " যারা জীবনের মহিমা তুলে ধরে তারাও বোঝে জীবন কতটা অসহনীয়! কতটা বিরক্তিকর এই পুনরাবৃত্তি!  কতটা বন্দী এই জীবন-মৃত্যুর বৃত্ত!  কতটা একঘেয়ে এই শনি, রবি, সোম গুনে চলা!  প্রতিটা মানুষই যে হাতের গিটে দিন গোনাতে ক্লান্ত! প্রতিটা মানুষই তো জীর্ণ-শীর্ণ-বিধ্বস্ত !   

তবুও আমি থাকবো

আমি মারা যাবার পর পঁচে মিশে গেলেও তো মাটিতে আছি! সেই মাটির বুকে গাছের পাতায়, ফলে, ফুলে তো আমি আছি! সেই ফল মা পাখি তার সন্তানকে খাওয়ালে সেই পাখি উড়তে শিখলে সেই আকাশে তো আমিও উড়ছি!  আমি মারা যাওয়ার পর আগুনে পুড়ে ছাই হলেও তো আমি ছাইয়ে আছি! সেই ছাই বাতাসে উড়ে গিয়ে খেলার মাঠে পড়লেও তো আমি সেখানে আছি।  বালকরা সেই মাঠে ফুটবল খেললে সেই কচি পায়ে ধুলোর সাথে তো আমি আছি! আমি নদীতে ডুবে মরে গেলেও তো সেই পানিতে আমি গলে মিশে  আছি! সেই নদীর বুকে পলি জমলে সেই মাটিতে তো আমি আছি।  সেই মাটিতে শস্য ফলালে সেই শস্যদানায় তো আমি আছি। মহাবিশ্ব থেকে পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে গেলে সেই ধ্বংসাবশেষে তো আমি আছি।

জন কীটসের যে কবিতা পড়ার সময় আমি থমকে গিয়েছিলাম - ১

ছবি
ভয় হচ্ছে, আমার চিন্তাগুলোকে কলমের ডগায় তুলে আনার আগেই যদি মৃত্যু আমাকে গ্রাস করে! যেমনিভাবে শস্যভাণ্ডার পূর্ণ হয় তেমনিভাবে আমার লেখার ভান্ডার পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যদি আমি মারা যাই!  যখন রাতের নক্ষত্রখচিত আকাশের মুখপানে তাকাই তখন আমি মেঘগুলোর মাঝে প্রেমরূপময়তা খুঁজে পাই। এবং ভাবি এসমস্তকে কবিতায় ফুটিয়ে তোলার জন্য আমার আর বেঁচে থাকার সুযোগ হবে না! যখন আমি উপলব্ধি করি আমি নিতান্তই ক্ষণিকের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলাম এবং তোমাকে  আমি আর দেখতে পাবো না, তোমার প্রতি আমার এই একতরফা ভালোবাসার যে শক্তি তা আমি আর আস্বাদন করতে পারবো না তখন এই বিশাল পৃথিবীর তীরে আমি একা দাঁড়িয়ে ভাবি- প্রেম, খ্যাতি সবই একদিন অর্থহীনতায় নিমজ্জিত হবে।  কবিতা - When I have Fears That I May Cease to Be কবি - জন কীটস (ছবির হস্তাক্ষর - নিজের) (কবিতার মূলভাব নিজের মতো করে)  

যুদ্ধ প্রাচ্যে হোক বা পাশ্চাত্যে

 "রক্ত আমার ঝরুক বা অন্যের, রক্ত তো মানুষেরই ঝরবে! যুদ্ধ প্রাচ্যে হোক বা পাশ্চাত্যে,  বিশ্ব শান্তিরই রক্ত ঝরবে!  (বিশ্ব শান্তি বিনষ্ট হবে) . তোমরা কত মহান এটা বোঝানোর জন্য,  রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া কি এতই জরুরি? ঘরের মানুষগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমাতে, ঘরটাই জ্বালিয়ে দেওয়া কি আসলেই জরুরি?  . বোমা মানুষের ঘরে পড়ুক কিংবা সীমান্তে, মানুষের ভালোবাসার চেতনাই পায় আঘাত! ক্ষেত আমার পুড়ে যাক বা অন্য কারো, মানুষেরাই ফসল হারায়, পায়না খেতে ভাত! . যুদ্ধের ট্যাংক আগে বাড়ুক বা পিছে, (যুদ্ধে জয়যাত্রা হোক বা পলায়ন) পৃথিবী চাপা পড়বে ধ্বংসস্তুপের নিচে! বিজয়ে উৎসব হোক বা শোক পরাজয়ে, যুদ্ধে মৃত মানুষদের জন্য জীবিতরা কাঁদে! . যুদ্ধ নিজেই পৃথিবীর একটা প্রধানতম সমস্যা, যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধানের কিভাবে কর আশা? যুদ্ধ আজ দিবে আগুন আর লাশের সারি , আর আগামীতে দুর্ভিক্ষ-দারিদ্র্য আর মহামারি!  . এজন্যই ভালো লোকেরা বলে, যুদ্ধ যত পেছানো যায়, ততই ভালো! আপনার আর আমার উভয়ের ঘরেই, জ্বলতে থাকুক শান্তি-সুখের আলো!" . মূল : শাহির লুধিয়ানভি রূপান্তর প্রচেষ্টা : শামস অর্ক  https://www.facebook.com/Sh...

ঈশ্বরের সাথে বিদ্রোহ

ছবি
জন্মদানবিরোধ ১ বাবার সাথে ঈশ্বরের (ধর্মগ্রন্থগুলোর কল্পিত ঈশ্বর) বড় মিলটা হলো - ঈশ্বর আমাদের (আমরা না চাইতেই, নিজের খেয়াল খুশিমত) সৃষ্টি করে নিজেকে বিশাল কিছু ভাবে। তেমনি বাবারাও জন্ম দিয়ে ভাবে, কী একটা মহিমান্বিত কাজ করে ফেলেছে! "এরচেয়ে ভালো হতো না কিছু,  যদি না হতো কভু জনম আমার। তারপরে ভালো হতো যদি জনমের পরে দেরি না করে ফিরে যেতাম আবার! কেননা যৌবনের নেশা কেটে গেলে,  জীবন আটকে পড়ে যন্ত্রণার জালে।  যন্ত্রণা, যন্ত্রণা কেবলই যন্ত্রণা; এই চক্র থেকে কারোরই কি মুক্তি মেলে?" মূল- সফোক্লিস  অনুবাদ - শামস অর্ক জন্ম, অর্থহীন জীবন, খাওয়া, ঘুম, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া, সেক্স, শনি-রবি-সোম গোনা,  সবুজ ঘাস, উঁচু পাহাড়,  নীল জলের সমুদ্র দেখে জীবন সুন্দর বলা, সবশেষে মৃত্যু! এসবেরই পুণরাবৃত্তি করানোর জন্য বাবাদের ভূমিকা অপরিসীম! ( অন্তত তাদের এত মহিমান্বিত করানোর মত কিছুই না তারা)  তারা আমাদের জন্ম দেয়, আমরা আবার সন্তানদের জন্ম দেই! চলতেই থাকে......  তারা যেমন আমরা না চাইতেই,  আমাদের অনুমতি না নিয়ে,  জোর করে জীবন চাপিয়ে দিয়ে, মৃত্যু অবধারিত জেনেও জন্ম দ...